সাভারের আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানার সেপটিক ট্যাংক থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বুধবার রাতে
ছবি: প্রথম আলো

সাভারের আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানার সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে প্রাণ গেছে তিন শ্রমিকের। বুধবার বেলা তিনটার দিকে আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকার আল রহমান নিট ফ্যাশন বিডি লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার ভেতরে সেপটিক ট্যাংকে এ ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে নয়টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করের ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

নিহত তিনজনের নাম মো. মিঠু (২২), মো. রাকিব (২২) ও মোহাম্মদ আলী (২৭)। তাঁদের মধ্যে মিঠু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার খাগালিয়া গ্রামের সহিদ মিয়ার ছেলে। তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। থাকতেন আশুলিয়ার জামগড়ার শিমুলতলা এলাকায় ভাড়া বাসায়। রাকিব খুলনা জেলার বটিয়াঘাট থানার বুনারবাদ গ্রামের নুর ইসলাম শিকদারের ছেলে এবং মোহাম্মদ আলী রংপুর জেলার গাংগাচড়া থানা গ্রামের ফেরদৌস রহমানের ছেলে। তাঁরা দুজনই আল রহমান নিট ফ্যাশন বিডি লিমিটেডের শ্রমিক।

স্থানীয় লোকজন জানান, বুধবার বেলা তিনটার দিকে কারখানার সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নামেন মিঠু। ঘণ্টাখানেক কাজ করার পর তাঁর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে রাকিব সেপটিক ট্যাংকে নামেন। কিছুক্ষণ পর তাঁরও কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে মোহাম্মদ আলী সেপটিক ট্যাংকের পাশে গিয়ে দেখতে গেলে তিনি ট্যাংকের ভেতরে পড়ে যান। এ সময় মিঠুর বাবা ছেলের খোঁজ না পেয়ে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন। পরে ডিইপিজেডের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত আটটার দিকে ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেন তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. জাহিদ বলেন, বেলা তিনটার দিকে মিঠু সেপটিক ট্যাংকে পরিষ্কার করতে নামে। ট্যাংকের ভেতর সাড়া পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করতে নেমে প্রাণ গেছে রাকিব ও মোহাম্মদ আলীরও।

এ বিষয়ে ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফায়েড, কার্বন–মনোক্সাইড গ্যাস হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ট্যাংকের ভেতর একজন নিখোঁজ হওয়ার পর বাকিরা উদ্ধার করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে বাকি দুজনও নিখোঁজ ও নিহত হন।

ঘটনার পরপরই কারখানা কর্তৃপক্ষের সবাই সটকে পড়েছেন। তবে মুঠোফোনে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঢাকার বাইরে অবস্থান করছি। তবে যতটুকু শুনেছি, একজন ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে নিখোঁজ হন। পরে পর্যায়ক্রমে বাকি দুজন উঁকি দিয়ে দেখতে গিয়ে নিচে পড়ে তাঁরাও নিখোঁজ হন। প্রতিষ্ঠানটি সিসি ক্যামেরায় আওতায় আছে। তাই ফুটেজ দেখার পর এ বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া যাবে।’