মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের ‘প্রস্তাবিত’ পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি খসড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দায়িত্বশীল কোনো নেতার স্বাক্ষর না থাকলেও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে এই কমিটিই অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

প্রস্তাবিত এই কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নতুন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অনেক নেতাই এই কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা অবশ্য বলছেন, নেতা–কর্মীদের মধ্যে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে অসন্তোষ থাকতে পারে। তবে সক্রিয়তা ও যোগ্যতার বিচারেই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রস্তাবিত ওই কমিটির খসড়া প্রকাশ করেন মাগুরা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মীর শহিদুল ইসলাম। এরপর কমিটির ওই খসড়া বিভিন্ন মানুষকে শেয়ার করতে দেখা যায়। সেখানে ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট মূল কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদে ২২ জনের একটি তালিকা রয়েছে। প্রস্তাবিত এই কমিটিতে ১১ জন সহসভাপতি, তিনজন করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পাশাপাশি ৩৬ জন সদস্য রয়েছেন।
প্রস্তাবিত ওই কমিটিতে আগের কমিটির চারজনের সঙ্গে নতুন সহসভাপতি হয়েছেন সাতজন। তাঁরা হলেন আইনজীবী শফিকুল ইসলাম, আইনজীবী কামাল হোসেন, জেলা পরিষদ সদস্য কামরুন নাহার, সূর্য কান্ত বিশ্বাস, বেনজির আহম্মেদ, সোহেল পারভেজ দ্বীপ, মীর আ. রাজ্জাক। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি তানজেল হোসেন খানের স্ত্রী কামরুন নাহার ছাড়া অন্যরা সবাই আগের কমিটিতে বিভিন্ন পদে ছিলেন।

প্রস্তাবিত এই কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন শফিকুজ্জামান বাচ্চু, খুরশীদ হায়দার ও শাখারুল ইসলামের নাম। আর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আছেন মুস্তাফিজুর রহমান, আইনজীবী রাশেদ মাহমুদ ও রানা আমীর ওসমান।

প্রস্তাবিত কমিটিতে নতুন সদস্যদের মধ্যে অন্যতম হলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ রেজাউল ইসলাম (প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক), কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি শওকতুজ্জামান সৈকত (যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক), কর্নেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দিন (শিক্ষা ও মানবসম্পদ–বিষয়ক সম্পাদক), চিকিৎসক রাহুল মিত্র (স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা–বিষয়ক সম্পাদক), জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন (উপ দপ্তর সম্পাদক) ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন (উপপ্রচার সম্পাদক)।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পরই আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নতুন কমিটি নিয়ে বিতর্ক শুরু করেন। তাঁদের একজন শফিকুজ্জামান বাচ্চু। তিনি প্রয়াত সংসদ সদস্য আছাদুজ্জামানের ছেলে ও মাগুরা–১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের ভাই। নিজের ফেসবুক ওয়ালে এই আওয়ামী লীগ নেতা লেখেন, নতুন এই কমিটি তাঁর সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই হয়েছে। তিনিসহ অন্য যে দুজনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (খুরশীদ হায়দার ও শাখারুল ইসলাম) করা হয়েছে, এই সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন এই নেতা। কারণ, তাঁরা তিনজনই নিকটাত্মীয়। যদিও সবশেষ কমিটিতেও তিনজনই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই কমিটি ভালো হয়নি।’

কমিটিতে জায়গা না পাওয়া অনেক নেতার পাশাপাশি সবশেষ কমিটিতে থাকা কয়েকজন নেতা নতুন এই কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জানতে চাইলে খুরশীদ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্বল কমিটি হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

রাশেদ মাহমুদ বলেন, ‘এমন ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে যাঁদের দ্বারা আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা একসময় নির্যাতিত হয়েছে। এতে আমরা ক্ষুব্ধ।’

এক প্রশ্নের জবাবে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক রানা আমীর বলেন, ‘ত্যাগীদের দূরে ঠেলে দিয়ে বিতর্কিত, জীবনে কখনো জয় বাংলা বলেনি এমন লোকজনকে কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে।’

এসব নেতার কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, এখন আওয়ামী লীগের কমিটিতে জায়গা পাওয়ার মূল যোগ্যতা হচ্ছে সংসদ সদস্যদের আস্থাভাজন হওয়া। এতে অনেক ত্যাগী নেতা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ফ ম আবদুল ফাত্তাহ ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু বলেন, ফেসবুকে কোনো কমিটি প্রকাশ হয়েছে, তা তাঁরা জানেন না। তবে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রস্তাবিত একটি কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘গত কয়েক বছরের কার্যক্রম বিবেচনা করেই কমিটি করা হয়েছে। যাঁদের নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, তাঁরা আগে থেকেই কমিটিতে ছিলেন। স্থানীয় দুই সংসদ সদস্যের পরামর্শ নিয়ে কমিটি করা হয়েছে।’