ময়মনসিংহে মাজারের ৫০তম বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠান ঘিরে উত্তেজনা

ময়মনসিংহের হজরত শাহ নেওয়াজ আলী ফকির (র.)-এর মাজারে ওরস উপলক্ষে তোরণ বানানো হয়েছে। রোববার সদর উপজেলার পাথালিয়া গ্রামের আউলিয়া বাজারেছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় একটি মাজারের ৫০তম ওরস অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় মুসল্লিদের একটি পক্ষ ওরসে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করে আয়োজন প্রতিহতের ঘোষণা ও থানায় অভিযোগ দিয়েছে। এর মধ্যেই চলছে তিন দিনব্যাপী ওরস উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি।

ময়মনসিংহ নগর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার ভাবখালী ইউনিয়নের চকবন পাথালিয়া গ্রামের আউলিয়া বাজারে হজরত শাহ নেওয়াজ আলী ফকির (র.)-এর মাজারে ওই ওরসের আয়োজন চলছে। এখানে ২৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫০তম বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জানুয়ারি স্থানীয় কিছু কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমামেরা মাজারের লোকজনকে গিয়ে ওরস বন্ধ করার দাবি জানান। ওরসের নামে বিদাত ও শিরক করা হয় বলে দাবি তাঁদের। এ সময় মাজারের লোকজন তাঁদের কাছে গান–বাজনা বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্যে স্থানীয় ভাবখালী বাজারে ইত্তেফাকুল উলামা ও ভাবখালী ঐক্য উলামা পরিষদের ব্যানারে গত শুক্রবার বিকেলে মানববন্ধন করেন মুসল্লিরা। ওরস বন্ধের দাবিতে তাঁরা থানায় একটি আবেদনও করেন।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাশের জমিতে দোকানপাট ও নাগরদোলা বসানোর প্রস্তুতি চলছে। মাজারের সামনে বড় একটি তোরণ করা হয়েছে। মাজারের কিছু স্থানে রং করছেন কয়েকজন শ্রমিক। মাজারের ভেতরে কোরআন তিলাওয়াত করছেন একজন ভক্ত। মাজারের পাশে জামে মসজিদ এবং সামনে একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা।

ঢাকা থেকে আসা একজন ভক্ত বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এই মাজারের মাহফিলে আসি; কিন্তু এবারের মতো পরিস্থিতি আর কখনো হয়নি। এখানে অন্যায় কিছু হয় না। কিন্তু অহেতুক ওরস বন্ধের দাবি করছে একটি পক্ষ।’

মাজার কমিটির সদস্য স্থানীয় মনির উদ্দিন জানান, ওরস উদ্‌যাপনে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে ৫ জানুয়ারি লিখিতভাবে আবেদন করা হয়। এত বছর ওরস উদ্‌যাপনে কোনো বাধা আসেনি; কিন্তু এবার স্থানীয় কয়েকজন হুজুর এটি বন্ধ রাখতে বলছেন। মাজার ভাঙার হুমকি দিচ্ছেন। এরপরও তাঁরা যেকোনো মূল্যে ওরস করবেন।

মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ফকির প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫০ বছর ধরে ওরসটি চলছে। দেশজুড়ে ওরস হলেও আমাদের নিরীহ পেয়ে ওরস বন্ধের পাঁয়তারা করছেন হুজুররা।’

উত্তেজনার মধ্যে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান। মাজার কমিটির লোকজন এবং ইত্তেফাকুল উলামার লোকজন ওই বৈঠকে ছিলেন। বৈঠকে ওরসের নামে বাজার, গান–বাজনা ও অশ্লীলতা হবে না বলে আশ্বাস দেন মাজারের লোকজন।

ইত্তেফাকুল উলামার ভাবখালী ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোবারক হোসেন বলেন, মাজারের ওরসের নামে সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপ হয়। সেখানে মাদক, জুয়া ও গান–বাজনা হোক তাঁরা চান না। স্থানীয়ভাবে প্রথমে তাঁদের বোঝানোর পর প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। পুলিশ জানিয়েছে, কোনা গান–বাজনা, অশ্লীলতা চলবে না। কোনো দোকানপাট বসবে না। শুধু জিকির ও কোরআন তিলাওয়াত করতে পারবে। যদি এর ব্যত্যয় হয় বিষয়টি প্রশাসন দেখবে।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম খান জানান, ওরস ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হলে দুই পক্ষকে নিয়ে আজ থানায় আলোচনা হয়। গান–বাজনা, জুয়া না হলে হুজুরদের কোনো আপত্তি নেই। গান–বাজনা ও অসামাজিক কার্যকলাপ করবে না বলে মাজারের লোকজন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশের নজরদারি থাকবে।