ঘুমধুমের রোহিঙ্গা শিবিরে গণহত্যা দিবসের কর্মসূচি পালিত হয়নি

পাঁচ বছর আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে
ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে অন্তত ২৫টি এলাকায় রোহিঙ্গারা ‘গণহত্যা’ দিবস পালন করেছে। তবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে গণহত্যার কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি।

ঘুমধুম আশ্রয়শিবিরের পেছনে লাগোয়া মিয়ানমার সীমান্ত ও কাঁটাতারের বেড়া। কাঁটাতারের পাশে উঁচু পাহাড়ের সারি। পাহাড়ে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একাধিক চৌকি। বলা যায়, পাহাড়ের নিচে পাঁচ বছর ধরে অবস্থান করছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত ৪ হাজার ২০০ রোহিঙ্গা।

গণহত্যা দিবস পালিত না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অ ভাই, মাথার ওঅরত (উপর) গুলি চলের, পায়ারত (পাহাড়ে) দাউ দাউ গরি জ্বলের অইন (আগুন), আঁরা ক্যানে গইজ্জ্যুম (করব) গণহত্যা দিবসর আয়োজন।’

দিল মোহাম্মদের দাবি, রাখাইন রাজ্যের ওয়ালাডং পাহাড়ে কয়েক দিন ধরে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। মর্টার শেল-ভারী অস্ত্রের পাশাপাশি আর্টিলারিও ব্যবহৃত হচ্ছে। গুলির বিকট শব্দে রোহিঙ্গাদের ঘুম হয় না। পাহাড়ের নিচে রোহিঙ্গা বসতি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দফায় দফায় গুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় উদ্বিগ্ন এখানকার রোহিঙ্গারা। নিরাপত্তার শঙ্কায় কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। ১৫ থেকে ১৬ দিন ধরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

দিল মোহাম্মদের (৫০) বাড়ি রাখাইন রাজ্যের মেদিপাড়ায়। ১০ বছরের বেশি সময় তিনি বিজিপির সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে পতাকা বৈঠক চলার সময় তিনি দোভাষীর কাজ করতেন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট তাঁকে প্রাণ বাঁচাতে জন্মভিটা ছেড়ে এ দেশে চলে আসতে হয়।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, গত বছরও তাঁরা এই আশ্রয়শিবিরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে গণহত্যা দিবসের কর্মসূচি পালন করেন। এবারও সে রকম কর্মসূচির প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিবেচনা করে কর্মসূচি পালনে বিরত থাকেন রোহিঙ্গারা। অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কোনো বিধিনিষেধ ছিল না।

আজ বিকেল তিনটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মির’ সংঘর্ষ চলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে এপার থেকে এর সত্য-মিথ্যা যাচাই করা সম্ভব নয়। ওই পারের গোলাগুলির ঘটনা নজরদারিতে রেখেছে বিজিবি।

ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত ফাঁড়ির ইনচার্জ ও পুলিশ পরিদর্শক সোহাগ রানা প্রথম আলোকে বলেন, ওই পারে গোলাগুলি হচ্ছে। কিন্তু কেন হচ্ছে এবং কারা করছে, সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তা ছাড়া শূন্যরেখায় পুলিশের যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে এ পর্যন্ত ঘুমধুম এলাকায় ওই পারের গুলি কিংবা মর্টার শেল এসে পড়েনি।

শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি-আইসিআরসি। নো ম্যানস ল্যান্ডে গড়ে তোলা এই আশ্রয়শিবিরে অন্য কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সেবা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ নেই।