পাঁচ নৌকা থেকে কোটি টাকা ডাকাতির অভিযোগ, দায় এড়াল দুই থানার পুলিশ

নরসিংদী জেলার মানচিত্র

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের সদাগরকান্দি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার দুর্গারামপুর নৌ সীমানার মধ্যবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীতে অন্তত পাঁচটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় তাঁরা গরু ব্যবসায়ী ও নৌকার যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ কোটি টাকা, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন মাল লুট করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রায়পুরা ও নবীনগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল নিজের এলাকায় পড়েনি বলে দাবি করে দায় এড়িয়েছে।

ডাকাতদের হামলায় আহত অনেককে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন রায়পুরার চানপুর ইউনিয়নের সদাগরকান্দি গ্রামের মো. মওলা মিয়া ছেলে মহসীন মিয়া (১৮) ও সামসু মিয়ার ছেলে নাসির মিয়া (৩০)।

জানতে চাইলে চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোমেন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, একদল ডাকাত স্পিডবোটে করে এসে অন্তত ৫টি নৌকায় ডাকাতি করেছে। চার বছর আগে ওই স্থানেই আরেকটি বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল।’

নবীনগরের বাইশমৌজা এলাকা প্রতি মঙ্গলবার গরুরহাট বসে। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত ব্যাপারী ওই হাটে যান। কেউ কেউ গরু বেচতে নিয়ে যান, কারও কারও কাছে থাকে গরু কেনার নগদ টাকা।

ডাকাতির শিকার গরু ব্যবসায়ীদের কয়েকজন বলেন, রায়পুরার নিলক্ষ্যাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাইশমৌজা গরুরহাটে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সদাগরকান্দি লঞ্চঘাটের কাছাকাছি যাওয়ার পর দুটি স্পিডবোট নিয়ে আট-নয়জন মুখোশধারী ডাকাত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁদের ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় তাঁদের কাছে থাকা গরু কেনার নগদ টাকা, মুঠোফোনসহ অন্য মালামাল ছিনিয়ে নেয়। যাঁরাই বাধা দিয়েছেন, তাঁদের কুপিয়ে আহত করে ডাকাতেরা। এভাবে আরও কয়েকটি নৌকায় ডাকাতি করে তারা। সব কটি নৌকাই পাশের উপজেলা নবীনগরের বাইশমৌজা গরুরহাটের দিকে যাচ্ছিল।

ডাকাতেরা যখন স্পিডবোটে করে আসে, তখন রায়পুরা থানার অন্তর্ভুক্ত মির্জারচর নৌ ফাঁড়ির কয়েকজন পুলিশ সদস্য একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় কাছাকাছি ছিলেন বলে দাবি করেছেন গরু ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেন, পাঁচটি নৌকায় ২০০ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন। তাঁদের প্রায় সবাই গরু ব্যবসায়ী। টাকা দিতে না পারায় কয়েকজনকে মারধরও করে ডাকাতেরা।

ডাকাতদের হামলায় আহত নাসির মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুজন নৌকায় থেকে নিয়মিত তেল বিক্রি করি। আমাদের দিকে স্পিডবোট এগিয়ে আসায় মনে করেছিলাম, তেল নেওয়ার জন্য আসছে। কিন্তু ডাকাত দলটি আমাদের মারধর করে টাকা ও মুঠোফোন নিয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে মির্জারচর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ প্রদ্যুৎ সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি ধরেননি।

তবে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাকাতির বিষয়ে শুনেছি। তবে ঘটনাস্থল রায়পুরার সীমানার মধ্যে পড়েনি। পড়েছে পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার মধ্যে। এ বিষয়ে তাঁরাই আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।’

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার ওসি সাইফুদ্দীন আনোয়ার বলেন, ‘আমাদের নৌ পুলিশের মাধ্যমে জেনেছি, ঘটনাস্থল পড়েছে রায়পুরা থানার মির্জারচর নৌ সীমানায়। ভুক্তভোগী একজন আহত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেও এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি। ফলে এ ঘটনায় আমাদের কিছুই করার নেই। যা করার রায়পুরা থানাকে করতে হবে।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, এই রুটে কয়টি স্পিডবোট চলে, কারা এসব স্পিডবোটের মালিক ও চালক—এসব তথ্য প্রশাসনের কাছে নেই। নৌ পুলিশের কাছে এত গতিসম্পন্ন স্পিডবোটও নেই। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ডাকাতি করে দলটি।