নানা সমস্যায় চরম ভোগান্তি

এই লঞ্চঘাট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু ঘাট এলাকার রাস্তা ভালো না হওয়ায় যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে।

ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা লঞ্চঘাটে যাত্রীদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। লঞ্চঘাটে আসার রাস্তাও এবড়োখেবড়ো। শনিবার তোলা ছবিপ্রথম আলো

দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ত ভোলার সদর উপজেলার ইলিশা লঞ্চঘাট। বার্ষিক প্রায় ৩ কোটি টাকা ইজারা দেওয়া লঞ্চঘাটে কোনো যাত্রীছাউনি নেই। নেই লঞ্চঘাটে যাতায়াতের সংযোগ সড়ক, জেটি ও ভালো মানের পন্টুন। নেই গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এসব কারণে এখানে এসে যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকেরা চরম দুর্ভোগ পোহান।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভোলা অংশের দুই পাশে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় সড়কের এক পাশে যানবাহনের লম্বা লাইন, যা নদী পার হওয়ার অপেক্ষায় আছে। যতটুকু ফাঁকা সড়ক আছে, সেখান দিয়েই যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সড়কের শেষ মাথায় জংশন বাজার, তারপর মেঘনা নদী। নদীতীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। প্রায় ৮ মিটার উঁচু বাঁধ পার হয়ে যানবাহন ও যাত্রীদের লঞ্চ ও ফেরিঘাটে যেতে হচ্ছে। সড়ক বরাবর উত্তরে ইলিশা ফেরিঘাটের পন্টুন।

ফেরি পারাপার হতে আসা কয়েকজন যাত্রী বলেন, সড়ক বিভাগের পাকা সড়ক ধরে গিয়ে বাঁধের ওপর উঠে ডান দিকে কিছু দূর গিয়ে ইলিশা লঞ্চঘাট। ২৪ ঘণ্টা এ লঞ্চঘাট থেকে ঢাকা ও লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশে ৩০টির মতো লঞ্চ ছেড়ে যায়। যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহানো ছাড়া লঞ্চে বা পন্টুনে ওঠার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। তবুও বাধ্য হয়ে তাঁদের যেতে হচ্ছে।

বৃষ্টি হলে সংযোগ সড়কে কাদাপানি জমে, ঘাট ডুবে যায়, যাত্রী ওঠানামায় ভোগান্তি বাড়ে।
ইউসুফ পাটওয়ারী, ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা

চালক ও যাত্রীরা জানান, একটি লঞ্চঘাটে তিনটি পন্টুন তিন স্থানে বসানো। লঞ্চঘাটে গিয়ে জানতে হয়, কোন পন্টুন থেকে লঞ্চ ছাড়বে। প্রথমত, লঞ্চঘাটে সরাসরি যাওয়ার মতো কোনো সংযোগ সড়ক নেই। গাড়ির চালক ও যাত্রীরা ফেরিতে ওঠার রাস্তা ব্যবহার করে বাঁধের ওপর দিয়ে লঞ্চঘাটের দিকে মোড় নেন। ফেরিঘাটের পণ্যবাহী ছোট-বড় ট্রাক, যাত্রীবাহী যানবাহন ও লঞ্চঘাটের যাত্রীবাহী গাড়ি একটি বাঁধে ওঠার চিকন সড়ক দিয়ে ওঠানামা করে। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বাঁধের দুই পাশে যত্রতত্র দোকানপাট গড়ে ওঠায় সড়ক দিয়ে চলাচলের জায়গা সরু হয়ে গেছে। বাঁধের কাঁচা সড়কের মধ্যে বড় বড় গর্ত। শীতে কুয়াশা পড়ে, বর্ষাকালে কাদাপানিতে সড়ক পিচ্ছিল থাকে।

লঞ্চঘাটের আশপাশে মাছঘাট থাকার কারণে সব সময় বাঁধের মাটি পিচ্ছিল থাকে। বাঁধের ওপর থেকে খাড়া পথ পাড়ি দিয়ে ব্লক বাঁধে নামতে হচ্ছে। এবড়োখেবড়ো পথ পেরিয়ে গ্যাংওয়ে দিয়ে লঞ্চঘাটের পন্টুনে উঠতে হচ্ছে। সেই পন্টুন আবার নামকাওয়াস্তে বসানোর কারণে বেশির ভাগ সময়, (বিশেষ করে ভাটার সময়) নদীর দিকে কাত হয়ে থাকে। পন্টুনে ওঠার পরই যাত্রীদের মনে হয়, নদীর দিকে গড়িয়ে পড়বে। শুধু দিনের বেলায় না, রাতেও যাত্রীদের এভাবে ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে ওঠানামা করতে হচ্ছে।

ইলিশা লঞ্চঘাটের ইজারাদার হোসেন শহীদ সরোয়ার্দি বলেন, প্রায় তিন কোটি টাকার ঘাট এটি। ভবিষ্যতে হয়তো আরও বাড়াবে। বর্তমানে ভোলার সবচেয়ে বড় লঞ্চঘাট এটি। ২৪ ঘণ্টা যাত্রী ওঠানামা করেন। কিন্তু তাঁদের বিন্দুমাত্র সেবা মেলে না। নদীর মধ্যে তিনটি বিচ্ছিন্ন পন্টুন ফেলে দিয়ে বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্ব শেষ। না আছে সরাসরি সংযোগ সড়ক, না আছে জেটি, ওঠানামার সিঁড়িও দুর্বল। এ দুর্ভোগ লাঘবে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিক চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো-১) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, এলজিইডির লঞ্চ ও ফেরিঘাট এলাকায় থাকা বাঁধের দুই পাশে টেকসই গাইড ওয়াল সড়ক নির্মাণ করা উচিত। তিনি কোনো দপ্তরকে না দিলেও মাসিক উন্নয়ন সভায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।

ভোলা নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইলিশা লঞ্চঘাটের বহুমুখী উন্নয়নের জন্য বিআইডব্লিউটিএর প্রকৌশল বিভাগকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে লঞ্চঘাটের সংযোগ সড়কসহ স্টিলের জেটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। চিঠির অনুলিপি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘাটটি আধুনিকায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করছে। কিছুদিন আগে ঘাটের মাটিও পরীক্ষা করেছে। কিন্তু কাজের গতি ধীর। আশা করি আধুনিকায়নের কাজ শেষ হলে সব সমস্যা দূর হবে।’