আশুলিয়ার বকেয়া বেতন ও কারখানা খোলার দাবিতে ৪ কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ঢাকার আশুলিয়ার বকেয়া বেতন ও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে নবীনগর–চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চারটি কারখানার শ্রমিকেরা। কারখানাগুলো ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) অবস্থিত এবং একই মালিকানাধীন। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান দিয়ে পানি ছিটিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সাড়ে তিন মাসের বেতন আটকে (বকেয়া) আছে। বারবার বেতন দিবে বইলা তারিখ দিলেও বেতন দেওয়া হয় নাই। খালি তারা সময় নেয়। ফ্যাক্টরি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করছে। বেতনও দেওয়া হয় না, ফ্যাক্টরিও খোলে না। বেতন ও বন্ধ ফ্যক্টরি খোলার জন্য বিক্ষোভ করলে পুলিশ টিয়ার শেল মারছে, গরম পানি মারছে।’
বিক্ষোভকারী শ্রমিকেরা জানান, ২২ অক্টোবর চারটি কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ ঘোষণা করার আগে তাঁদেরকে গত তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়নি। একাধিকবার বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলেও বেতন পরিশোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার সকাল আটটার দিকে বন্ধ কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন ও কারখানা খোলে দেওয়ার দাবিতে ডিইপিজেডের মূল ফটকের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে তাঁরা মূল ফটকের সামনে নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান দিয়ে পানিয়ে ছিটিয়ে শ্রমিকদেরকে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সকালে জড়ো হয়ে ডিইপিজেটের মূল ফটক অবরোধ করে রাখেন সাময়িক বন্ধ কারখানার শ্রমিকেরা। পরে বেপজা কর্তৃপক্ষ তাঁদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরাতে গেলে শ্রমিকেরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। বাধ্য হয়ে জলকামান দিয়ে পানিয়ে ছিটিয়ে তাঁদেরকে সরিয়ে দিতে হয়। পরে শ্রমিকেরা কিছু সময়ের জন্য মহাসড়ক অবরোধ করলে কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাঁদের সড়ক থেকে সরাতে হয়েছে।
ডিইপিজেডের কর্মকর্তারা জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়া চারটি কারখানা গোল্ডটেক্স লিমিটেডের মালিকানাধীন। এর মধ্যে দুটি গার্মেন্ট ও দুটি টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমসে মামলাসংক্রান্ত জটিলতা, আর্থিক সংকটের কারণে বন্দরে কাঁচামাল আটকে থাকা, ব্যাংকের সহায়তা না পাওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কারখানা কর্তৃপক্ষ।
ডিইপিজেড নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, সাউথ চায়না ব্লিচিং অ্যান্ড ডায়িং ফ্যাক্টরি লিমিটেড, গোল্ডটেক্স লিমিটেড, গোল্ডটেক্স গার্মেন্টস ও এক্টর স্পোর্টিং লিমিটেড সাময়িকভাবে বন্ধ। এ চারটি কারখানার মধ্যে তিনটি কারখানার শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তবে এ তিন কারখানার এক মাসের বেসিক বেতন পরিশোধ থাকায় মূলত আড়াই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া এক্টর স্পোর্টিং লিমিটেডের দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।
শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়মিত সভা করে এ বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানানো হচ্ছে।
শরীফুল ইসলাম বলেন, বন্ধ কারখানাগুলো চালুর চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট কারখানার কর্তৃপক্ষ। যদি তাঁরা ব্যর্থ হন তবে নির্দিষ্ট সময় পর সরকারি নিয়ম অনুসারে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিক্রি করে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হবে।