ফেরিওয়ালা জহিরুলের সংসার চলে না...

ফেরি করে সিলভারের জিনিসপত্র বিক্রি করেন জহিরুল ইসলাম। শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সুলতানা মন্দির এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

তখন শুক্রবার বিকেল তিনটা। ‘সিলভারের হাঁড়ি, পাতিল, কলস...’ বলে হাঁকডাক করে বাড়ির গৃহিণীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন ফেরিওয়ালা মো. জহিরুল ইসলাম। অনেক সময় ধরে ডাকলেন। কিন্তু কেউ সাড়া দেননি। এরপর তিনি যাত্রা করলেন অন্য বাড়ির উদ্দেশে। এভাবে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে ফেরি করে তৈজসপত্র বিক্রি করেন তিনি।

জহিরুলের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। ১৫ বছর ধরে তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় সিলভারের তৈজসপত্র বিক্রি করে সংসার চালান। তাঁর ভাষ্য, আগের মতো বেচাকেনা নেই। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পর বেচাকেনা এখন আরও কমে গেছে। মানুষ প্রতিদিনের খাবার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে হাঁড়ি–পাতিল কেনার প্রতি তাদের আগ্রহ নেই। এদিকে সংসারের খরচ বেড়েছে, কিন্তু আয় কমেছে তাঁর। সংসার তাঁর চলতে চাইছে না।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের সুলতানা মন্দির গ্রামে কথা হয় জহিরুলের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যা বেচাকেনা হচ্ছে, তা দিয়ে বাড়িতে থাকা তিন ছেলে, স্ত্রী ও বাবা-মা নিয়ে ছয়জনের সংসার আর চলে না। তার ওপর তাঁর নিজের খরচ আছে। তিনি চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরের একটি কারখানা থেকে ৪৮০ টাকা কেজি দরে সিলভারের জিনিস কিনে এনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ৫২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এক কেজিতে তাঁর ৪০ টাকা লাভ থাকে। আগে কারখানা থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে কিনে বাড়ি বাড়ি তা ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করতেন। তখন বিক্রি বেশি হতো, লাভও ভালো থাকত। এখন বিক্রি কম, বিক্রিও করতে হচ্ছে কম লাভে। আগে যা আয় হতো, তা থেকে হাজার দশেক টাকা বাড়িতে পাঠাতেন। এখন ছয় হাজারের বেশি টাকা বাড়িতে পাঠাতে পারেন না।

জহিরুল বলেন, ১৫ বছর ধরে তিনি এ ব্যবসা করছেন। চট্টগ্রাম নগরের কাট্টলী এলাকায় তিনিসহ চারজন ফেরিওয়ালা একসঙ্গে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকেন। চারজনে মিলে বাসাভাড়া দিতে হয় ছয় হাজার টাকা। খাবারদাবার, গাড়িভাড়াসহ সব মিলিয়ে মাস শেষে তাঁর নিজের খরচ পড়ে যায় ছয় হাজার টাকা।

জহিরুল ইসলাম বলেন, বাড়িতে কৃষিজমিতে চাষাবাদ আছে। চাষাবাদের সময় বাড়ি চলে যান। কারণ, শ্রমিক নিয়ে চাষ করার সামর্থ্য তাঁর নেই। বড় ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী। অন্য দুই ছেলেও পড়াশোনা করে। তাদের ঠিকমতো পড়াশোনার খরচ দিতে পারছেন না তিনি। বড় ছেলে এসএসসি পাস করলে খরচ আরও বাড়বে। জিনিসের দাম না কমলে তাঁর বেচাবিক্রি বাড়বে না। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলো কেমন করে চলবে, তা নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটে।