খেজুরগাছের ওপরে ওঠে নাচ, দেখছেন সবাই, বাজছে ঢাকঢোল

কয়েক শ মানুষ অপলক তাকিয়ে কাঁটাযুক্ত খেজুরগাছের দিকে। একদল সন্ন্যাসী গাছের নিচে নৃত্য করছেন। আর সন্ন্যাসীদের দলনেতা নতুন একটি গামছা কোমরে জড়িয়ে খালি পায়ে উঠে গেছেন খেজুরগাছের মাথায়। সেখানে ওঠে শুরু করেছেন নৃত্য। চলছে উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি। বাজছে ঢাকঢোল। গাছের মাথায় দাঁড়িয়ে সন্ন্যাসী খেজুর ফল ছুড়ে দিচ্ছেন অগণিত ভক্ত-দর্শকের দিকে। খেজুরের কচি ফল ‘ভোগ’ হিসেবে পেয়ে আত্মহারা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে এমন দৃশ্য দেখা গেল খুলনার কয়রা উপজেলার সদরের ১ নম্বর কয়রা গ্রামে। সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা উপজেলায় এটি ‘খেজুর ভাঙা সন্ন্যাসী উৎসব’ নামে পরিচিত।

খেজুর ভাঙা সন্ন্যাসী উৎসবে অংশ নেওয়া ধীরাজ কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেজুর সন্ন্যাসী পূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। এর মাধ্যমে শিবের আরাধনা করা হচ্ছে। এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের চড়কপূজার অন্যতম অনুষঙ্গ। শত শত বছর ধরে সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা উপজেলার কয়েকটি গ্রামে জাঁকজমকপূর্ণভাবে বাংলা বছরের শেষ দিকে এটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।’

উৎসবে উপস্থিত প্রবীণ সন্ন্যাসীরা বলেন, চৈত্র মাসের শেষে শিবভক্ত বানরাজা তাঁর সঙ্গী-সাথি নিয়ে নাচ-গানে আত্মহারা হয়ে শরীরের রক্ত বের করে তাঁর ছেলের উদ্দেশে সমর্পণ করেন। বানরাজার রক্ত উপহার পেয়ে শিব খুব খুশি হন। এসব অনেক অনেক দিন আগের কথা। এ ঘটনার পর থেকেই শিবকে তুষ্ট করার জন্য চড়ক উৎসব ও খেজুর ভাঙা উৎসব করেন ভক্তরা।

সন্ন্যাসী পবিত্র কুমার বলেন, আদিকাল থেকে মানবকল্যাণের জন্য খেজুর ভাঙা সন্ন্যাসী পূজা করা হয়। এ জন্য গোটা চৈত্র মাসে সন্ন্যাসীরা নিরামিষ খান। মাসের শেষ সপ্তাহ ধরে সারা দিন উপবাস থেকে রাতে শুধু ফল খেয়ে থাকেন। এভাবে উপবাস থেকে চৈত্র মাসের শেষ দিকে এসে সন্ন্যাসীরা পাড়া, মহল্লা ও গ্রামের পর গ্রাম পায়ে হেঁটে নেচে-গেয়ে শিবের আরাধনা করেন।

খেজুর ভাঙা সন্ন্যাসী উৎসবে উপস্থিত ১ নম্বর কয়রা গ্রামের সর্বজনীন শিবমন্দিরের সভাপতি অরুণ উদয় তরফদার বলেন, ‘বহু বছর ধরে আমাদের গ্রামে চৈত্র মাসের শেষ দিকে খেজুর ভাঙা উৎসব হচ্ছে। এটি আসলে শিবপূজা। শিবকে তুষ্ট করার জন্যই আমাদের এই আয়োজন। গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে মেয়ে, জামাতা ও অন্য আত্মীয়স্বজন আসেন। সবাই উৎসবে অংশ নিয়ে আনন্দ পান।’