অবশেষে মা–বাবাকে ফিরে পেলেন মানসিক ভারসাম্যহীন ভারতীয় সেই যুবক
অবশেষে দীর্ঘ দুই বছর পর মা–বাবার কাছে ফিরতে পেরেছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ভারতীয় যুবক সুভাষ (৩০)। দুই বছর আগে ভারতের উত্তর প্রদেশের বাহরাইচ জেলার রামনগরকান্ডা এলাকা থেকে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। বছর দেড়েক আগে তিনি বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা থেকে উদ্ধার হন। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ফিরতে পারছিলেন না।
দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর আজ মঙ্গলবার যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে তাঁকে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুভাষকে ফিরিয়ে নিতে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের শূন্যরেখায় অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর বাবা লক্ষ্মণ প্রসাদ ও মা সুনীতা।
হারানো ছেলেকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত সুভাষের মা–বাবা হিন্দি ভাষায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের ছেলে সুভাষ মানসিক ভারসাম্যহীন। মাঝেমধ্যে সে বাড়ি থেকে চলে যেত। দু-এক দিন পর আবার ফিরে আসত। শেষবার দুই বছর আগে বাড়ি থেকে চলে যায়; কিন্তু আর ফেরেনি। বাংলাদেশ থেকে শামসুল হুদা নামের এক ভদ্রলোক ভিডিও কলে সুভাষের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। তাঁর সহায়তায় বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুভাষকে ফিরে পেয়েছি। এ জন্য দুই দেশের সরকার ও শামসুল হুদাকে ধন্যবাদ জানাই।’
‘অ্যামেচার ভিডিও সোসাইটি বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল হুদা। তিনি গত বছরের ১২ মে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় ‘গ্লোরি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’য় গিয়ে সুভাষকে দেখেন। তাঁর বয়স ছিল ২৮ বা ৩০ বছর। ২০২১ সালের জুন মাসে ডিমলা থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। আহতাবস্থায় সড়কে পড়ে ছিলেন। নড়তেচড়তে পারছিলেন না। এক রিকশাচালক তাঁকে ডিমলা থানায় পৌঁছে দেন। অবস্থা গুরুতর দেখে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। নিউরোসার্জারি বিভাগে তিন মাস চিকিৎসার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দেয়। কিন্তু কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় তিনি হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে ছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে গ্লোরি সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় তাঁর ঠাঁই হয়।
৩০ অক্টোবর থেকে সেখানেই ছিলেন তিনি। সুভাষের সঙ্গে কথা বলে শামসুল হুদা জানতে পারেন, তাঁর বাড়ি ভারতের রামনগরকান্ডায়। কিন্তু কোন শহর বা রাজ্য, সেটা বলতে পারছিলেন না সুভাষ। তাঁকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে শামসুল হুদা মাঠে নামেন। পরে একটি গণমাধ্যমের প্রচেষ্টায় আজ বেনাপোল বন্দর দিয়ে তাঁকে স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সুভাষকে হস্তান্তরের সময় দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দূতাবাসের কর্মকর্তা, সুভাষের স্বজন ও ইমিগ্রেশন পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।