দেড় শ বছরের পুরোনো ‘সতিন মোচড়ে’ মুগ্ধ পিঠাপ্রেমীরা

‘সতিন মোচড়’ পিঠা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিনাজপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

তেল দিয়ে মিশ্রণটি মাখাতে হবে। এরপর অল্প করে হাতের তালুতে নিয়ে গোলাকৃতির করতে হবে। তবে মাঝে সামান্য ফাঁকা থাকবে, দেখতে অনেকটা বল্টুর মতো। পরে ভাঁজতে হবে। বাদামি রং ধারণ করলেই গুড়ের শিরার মধ্যে ডোবাতে হবে। সেখান থেকে তুলে ট্রেতে নিয়ে ভাঁজা তিল ওপরে ছিটিয়ে দিলেই হয়ে যাবে পিঠা। ঐতিহ্যবাহী এই পিঠার নাম ‘সতিন মোচড়’।

দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে অনুষ্ঠিত পিঠা উৎসবে বাহারি এই পিঠা দেখা গেল। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির দেশব্যাপী পিঠা উৎসবের অংশ হিসেবে দিনাজপুরেও তিন দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করেছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি। বুধবার বিকেলে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

উৎসবে পিঠা খাচ্ছেন দুই বন্ধু। বৃহস্পতিবার বিকেলে দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

মেলায় দিনাজপুরের উদ্যোক্তা, অনলাইন শপিং গ্রুপ, হৃদয়ে দিনাজপুর, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্ল্যাটফর্ম, অনলাইন উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্মসহ মোট পাঁচটি গ্রুপের ৩০ জন উদ্যোক্তা বাহারি সব পিঠা নিয়ে হাজির হয়েছেন। কাল শুক্রবার উৎসবের শেষ দিন।

সন্ধ্যায় উৎসবে গিয়ে দেখা গেল, শিল্পকলা চত্বরের তিন পাশে বিভিন্ন স্টল। দক্ষিণ প্রান্তে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ। পিঠা খেতে হইহুল্লোড় চলছে। উৎসবে ভাপা, চিতই, দুধপিঠা, নারকেল পুলি, পোয়া পিঠা, নুনিয়া পিঠা, মালপোয়া, গুড়গুড়িয়া, হৃদয়হরণ, নকশি পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, পাটিসাপটা, বিবিখানা, দুধ চিতইয়ের বিপুল সমাহার। পাশাপাশি সমুচা, ভেজিটেবল পাকোড়া, পাঁপড়, চটপটি, জার কেক, মালাই কেক, জর্দা পোলাও, খেজুর গুড়ের পায়েস, চিকেন রোল, পোলাপানরা বিক্রি হচ্ছে। আছে হরেক রকমের আচার এবং দিনাজপুরের লিচু ও শর্ষের মধু।

দিনাজপুর জেলা শিল্পকলা চত্বরে পিঠা উৎসবে পিঠাপ্রেমীদের ভিড়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

সতিন মোচড় পিঠার দেখা মিলবে তামান্নাস কিচেন স্টলে। স্বত্বাধিকারী তামান্না তাবাসসুম জানান, তিনি তাঁর এক মামির কাছে ওই পিঠা বানানো শিখেছেন। মামির বাড়ি নরসিংদীতে। মামির কাছে শুনেছেন, নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জ-নরসিংদী এলাকার জমিদারেরা তাঁদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে এ পিঠা বানাতেন। সতিন মোচড় ওই এলাকার দেড় শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী পিঠা। তিনি বলেন, ‘দুই বছর ধরে অনলাইনে খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করছি। এবার মেলায় প্রথম দিন থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। অনেকেই এসে সতিন মোচড় পিঠার গল্প শুনতে চাচ্ছে।’

মাকে সঙ্গে নিয়ে উৎসবে এসেছেন মুনিরা পারভিন। তিনি বলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। বাড়িতে পিঠা বানানো হয়। কিন্তু একসঙ্গে এত পিঠা দেখতে ও খেতে পারছি। কয়েকটি নতুন পিঠার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। পাশাপাশি সংগীতানুষ্ঠান চলছে। গান শুনছি, পিঠা খাচ্ছি, ভালোই লাগছে।’

পিঠার পাশাপাশি সমুচা, পাকোড়া, পাঁপড়সহ নানা জিনিস বিক্রি হচ্ছে উৎসবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

পেস্ট অব পেস্টি স্টলের স্বত্বাধিকারী নিলুফা লিপি বলেন, ‘আট রকমের পিঠা রাখছি স্টলে। বুধবার প্রথম দিনেই বিক্রি করেছি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। আজকে (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ৪ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি করেছি।’ তিনি বলেন, ‘বিক্রি বড় কথা নয়; মেলায় আসছি। আমার ফেসবুক পেজটার পরিচিতি হচ্ছে। এতেই ভালো লাগছে।’

উৎসবের নিয়ে জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা মীন আরা পারভিন বলেন, প্রথমবারের মতো এমন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ভালো সাড়া পেয়েছেন। মেলায় অনেকেই স্টল দিয়েছেন। স্থানীয়ভাবে দিনাজপুরে যারা অনলাইনে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি করেন, তাঁদের একটা পরিচিতি হলো। পাশাপাশি কিছু বাড়তি আয় হলো। মানুষ অনেক উৎসাহ ও আগ্রহ নিয়ে উৎসবে অংশ নিয়েছেন।