দল অংশ নেয়নি, কিন্তু ভোট দিলেন বগুড়ার বিএনপির নেতারা
জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে বর্জন করলেও বগুড়ায় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। তবে দলের শাস্তির ভয়ে অনেকেই ভোট দিলেও বিষয়টি অস্বীকার করছেন। ভোট দিয়েছেন জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ভোটাররাও। নির্বাচনে অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই টাকা ছড়ানোর কারণেই অনেকেই ভোটকেন্দ্রে গেছেন বলে স্থানীয়ভাবে আলোচনা হচ্ছে।
বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগ–মনোনীত প্রার্থী ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মকবুল হোসেন এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ। বিকেলে বেসরকারি ফলাফলে জানা যায়, মকবুল হোসেন আনারস প্রতীকে ৮৭৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আবদুল মান্নান আকন্দ কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৭২১ ভোট পেয়ে হেরেছেন।
বিএনপির যেসব জনপ্রতিনিধি আজকের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা হয় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে, নয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন বলা যায়। দলীয়ভাবে বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দলটি কোনো প্রার্থী দেয়নি। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে শুরু থেকেই এ নির্বাচন বয়কটের কথা জানিয়ে দলীয় নেতাদের সতর্ক করা হয়। কিন্তু দলীয় নির্দেশ লঙ্ঘন করে অনেক নেতা ভোটের মাঠে সরব ছিলেন। বিএনপির কয়েক নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এস এম জাকির হোসেন বলেন, বগুড়া সদর ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলেন ১৬২ জন। এর মধ্যে ইভিএমে ভোট প্রদান করেছেন ১৫৪ জন ভোটার। অনুপস্থিত আট ভোটারের মধ্যে একজন হত্যা মামলায় কারাগারে। বাকি সাতজন ভোট দিতে আসেননি।
দলের পদে থেকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়া শোভনীয় হয়নি। দলের পদধারী কোন কোন নেতা ভোট দিতে কেন্দ্রে গেছেন, খোঁজ নিয়ে দলীয় সভায় বিষয়টি তোলা হবে। এসব নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব দলের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যের সংখ্যা আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শাহ মেহেদী হাসান, ২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর একই ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেলা জাসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জামায়াত নেতা এরশাদুল বারী, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এনামুল হক, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিএনপি নেতা রুস্তম আলী, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জামায়াত নেতা রুহুল কুদ্দুস। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের সংখ্যা ৫।
স্থানীয় লোকজন জানান, সকাল নয়টায় ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকেই বিএনপির রাজনীতিতে পরিচিত মুখ ভোটাররা সরব ছিলেন বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদ ভোটকেন্দ্রে।
ভোট দিয়েছেন বিএনপির চার পৌর কাউন্সিলর শাহ মেহেদী হাসান, তৌহিদুল ইসলাম, পরিমল চন্দ্র দাস ও দেলোয়ার হোসেন। তাঁরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসেন। তবে পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘ভোট দিতে কেন্দ্রে যাইনি। কেউ বলে থাকলে মিথ্যে বলেছেন।’ ইভিএমের আঙুলের ছাপ ও সিসিটিভি ফুটেজের কথা মনে করিয়ে দিলে এই নেতা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আরেক পৌর কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোট দিতে কেন্দ্রে যাইনি। কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’
শাজাহানপুর উপজেলায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত জনপ্রতিনিধিরাও ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে মাদলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান এবং উপজেলা বিএনপির সদস্য ও আড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান ভোট দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
আড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান বলেন, ‘দলীয় প্রার্থী নেই সত্যি, তবে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়া যাবে না—দল থেকে এমন কোনো নির্দেশনাও ছিল না।’
বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে বর্জন করেছে বিএনপি। নেতা-কর্মীদের প্রতি এ নির্বাচন বয়কট করার নির্দেশনা দেওয়া ছিল। নির্দেশনা লঙ্ঘন করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় চারজনকে আগেই শোকজ করা হয়। দলের পদে থেকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়া শোভনীয় হয়নি। দলের পদধারী কোন কোন নেতা ভোট দিতে কেন্দ্রে গেছেন, খোঁজ নিয়ে দলীয় সভায় বিষয়টি তোলা হবে। এসব নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব দলের।