আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত চা–বাগানের শিশুরা 

চা-বাগান ও হাওর এলাকার মোট ১১৮টি ইসিডি সেন্টারে ২ হাজার ৭৯৫ শিশু প্রাক্‌-প্রাথমিক পর্যায়ে বিনা মূল্যে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছে।  

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লাখাইছড়া চা–বাগানের ডিগডিগীয়া প্রাক-শৈশব বিকাশ কেন্দ্র থেকে সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাখাইছড়া চা-বাগানের ডিগডিগীয়া এলাকার শিশুদের জীবন দেশের অন্য এলাকার শিশুদের মতো ছিল না। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাদের চা-শ্রমিক মা-বাবা চায়ের পাতা তোলার কাজে চলে যেতেন। মা-বাবা ছাড়াই রোদ-বৃষ্টির মধ্যে একা একা বড় হতে থাকে। এ কারণে এলাকার শিশুরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি—সব দিকেই পিছিয়ে ছিল। 

তবে শিশুদের জন্য গড়ে ওঠা ‘আলোয় আলোয় প্রকল্প’–এর শিশুকানন ডিগডিগীয়া প্রাক্‌-শৈশব বিকাশ কেন্দ্রের কারণে ওই চিত্র এখন পাল্টে গেছে। এখন ডিগডিগীয়ার শিশুরা পড়াশোনা করে, সময়মতো স্কুলে যায়। 

শুধু ডিগডিগীয়াই নয়, চা-বাগান অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার চা-বাগান ও হাওর এলাকার মোট ১১৮টি ইসিডি (আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট) সেন্টারে ২ হাজার ৭৯৫ শিশু প্রাক্‌-প্রাথমিক পর্যায়ে বিনা মূল্যে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছে।  

২০১৯ সাল থেকে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের ৩০টি চা-বাগান ও ২টি হাওর এলাকায় চাইল্ডফান্ড কোরিয়ার অর্থায়নে ও এডুকোর সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, আইডিয়া, এমসিডা ও প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন করছে আলোয় আলোয় প্রকল্প। 

ওই প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প থেকে চা-বাগানের লেবার লাইনে ৩-৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য একটি পাকা অবকাঠামো, স্থানীয় শিক্ষক, শিক্ষকের প্রশিক্ষণ, শিশুকানন পরিচালনার যাবতীয় উপকরণ, শিশুদের শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়। বাগানপর্যায়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অভিভাবক কমিটি শিশুকাননগুলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়মিত মনিটরিং করে। শিশুদের মা-বাবাকে গুড প্যারেন্টিং সেশন, পুষ্টিসেবা, বসতবাড়ির আঙিনায় শাকসবজি চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে প্রকল্প থেকে। শিশুরা আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করছে। 

শিশুকানন ডিগডিগীয়ার শিক্ষক রুমানা আক্তার বলেন, ‘এখানকার শিশুরা আগে পড়াশোনায় আগ্রহী ছিল কম। এখানে ইসিডি সেন্টার খোলার পর আমরা সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস করাই। শিশুরা এখানে খেলাধুলা ও ছড়াগানের মাধ্যমে প্রাক্‌-শৈশবের উপযোগী শিক্ষা অর্জন করছে। খেলাধুলার সামগ্রী ও রংতুলি-রংপেনসিলের ছোঁয়ায় তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। ফুল, পাখি, প্রজাপতি আঁকা এই সুন্দর শ্রেণিকক্ষে আসার জন্য শিশুরা উন্মুখ হয়ে থাকে। পাশাপাশি তাদের মা-বাবাও নিশ্চিন্তে শিশুটিকে রেখে কাজে যেতে পারছেন।’

প্রকল্পের কমিউনিটি প্রোমোটর রাসমণি শীল বলেন, ‘চা-বাগানের শিশুদের বেশির ভাগই পড়াশোনা করতে পারে না। এখানে স্কুল হওয়ার পর তারা স্কুলমুখী হচ্ছে। এর পাশাপাশি চা-বাগানের শিশুদের জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করতেও প্রকল্পের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিই। শিশুকাননের সব শিশুর যেন জন্মনিবন্ধন হয়, সেই বিষয়ে অভিভাবকদের নিয়মিতভাবে সচেতন করে থাকি।’

মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কিশোলয় চক্রবর্তী বলেন, আলোয় আলোয় প্রকল্প শিশুদের শিক্ষাক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে চা-বাগানের শিশুদের পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি শিশুকানন, প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও এগিয়ে নেবে।