রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কাচারী কোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গরিব ও দুস্থ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে সচ্ছল ব্যক্তিদের ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ওই তালিকায় পুলিশ ও শিক্ষকদের নাম আছে। এমনকি ১৪ জন সুবিধাভোগীর চাল সাত বছর ধরে আত্মসাৎ করা হয়েছে। অথচ ওই সুবিধাভোগীরা জানেন না যে তাঁরা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। সম্প্রতি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তথ্যভান্ডার প্রস্তুত করতে গেলে এ চাল আত্মসাতের ঘটনা প্রকাশ পায়।

চলতি মাসে কাচারী কোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক নিত্যানন্দ মণ্ডলের বিরুদ্ধে কয়েকজন উপকারভোগী চাল আত্মসাতের অভিযোগ করেন। কিন্তু ওই অভিযোগ তদন্ত না করেই তাঁকে চাল উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন ওই কর্মসূচির সভাপতি বাগমারার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইদা খানম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইদা খানম বলেন, যে সময়ে অনিয়ম হয়েছে, সেই চেয়ারম্যান এখন দায়িত্বে নেই। তাই পুরোনো অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করা সম্ভব নয়। অভিযোগ পাওয়ার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি।

যে ১৪ জন উপকারভোগীর চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে, তাঁদের একজন মিনতি রানী। এ বিষয়ে মিনতি রানী বলেন, তিনি কার্ডের জন্য চেয়ারম্যান ও ডিলারের কাছে ধরনা দিয়েও তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। নতুন করে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড পেতে আবেদন করতে গিয়ে জানতে পেরেছেন, তিনি সাত বছর ধরে এই সুবিধাভোগী। তিনি এ জন্য ডিলারকে দায়ী করে ইউএনওর কাছে ২ অক্টোবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ইউএনওর কাছে দুটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

কাচালী কোয়ালীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৪০ জন সুবিধাভোগীর নাম তালিকাভুক্ত করে চাল আত্মসাতের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া ওই পরিবেশক নিজের ও স্ত্রীর নামে কার্ড করেছেন। তাঁরা দুজনই স্কুলশিক্ষক।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু হয়। চাল বিক্রির জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে দুজন করে পরিবেশক নিয়োগ দেওয়া হয়। এ কর্মসূচির আওতায় দুস্থদের তালিকা প্রস্তুত করে অনুমোদনের পর তাঁদের নামে কার্ড ইস্যু করা হয়। ওই কার্ডের মাধ্যমে কার্ডধারীরা বছরের ৫ মাস ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারবেন ডিলারদের কাছ থেকে।

এদিকে গত আগস্ট মাসে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ডিজিটাল ডেটাবেজ’ প্রস্তুতের কাজ শুরু করে খাদ্য বিভাগ। তালিকা হালনাগাদ করতে সুবিধাভোগীদের ছবিসহ তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সুবিধাভোগী কার্ডধারীদের তথ্য সংগ্রহের সময় কাচারী কোয়ালীপাড়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪ ব্যক্তি জানতে পেরেছেন, তাঁরা ২০১৬ সাল থেকে তালিকাভুক্ত। তাঁদের নামে বরাদ্দ

চাল সাত বছর ধরে পরিবেশক উত্তোলন করে আসছেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, ইউনিয়নের নিয়োগ পাওয়া পরিবেশক নিত্যানন্দ মণ্ডল চালগুলো তুলে আত্মসাৎ করেছেন।

ওই এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন অভিযোগ দেওয়ার প্রমাণ সাংবাদিকদের দেখিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে তদন্ত না করে পরিবেশককে দুর্নীতিতে উৎসাহিত করা হলো।

কাচারী কোয়ালীপাড়া গ্রামের অনিক কুমার, আজাদ হোসেন, আবদুল মান্নান, ইভা রানী ও সুষমা রানী জানান, তাঁরা যে কর্মসূচির সুবিধাভোগী, তা জানতেন না।

কাচারী কোয়ালীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পুলিশ সদস্য মিঠুন কুমার বলেন, ত তিনি বা পরিবারের কোনো সদস্য কখনো চাল কেনেন না। তবে ডিলার তাঁর আত্মীয়।

এ বিষয়ে পরিবেশক নিত্যানন্দ মণ্ডল উপকারভোগীর চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘এ জন্য আমি একা নই, তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যানও দায়ী। তাঁর প্ররোচনায় তিনজনের নামের গরমিল করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে ইউপির তৎকালীন চেয়ারম্যান আয়েন উদ্দিন মুঠোফোনে বলেছেন, ডিলার অনিয়ম করে তাঁর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন।