ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সালিসে সংঘর্ষে বল্লমের আঘাতে ব্যবসায়ী নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গতকাল শনিবার রাতে চিকিৎসাধীন ছিলেন বল্লমের আঘাতে আহত শাহ আলম। সকালে ঢাকায় নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় সালিসে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে সংঘর্ষে শাহ আলম (৩৫) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের মেরাতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আজ রোববার সকালে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়।

নিহত শাহ আলম মেরাতলী গ্রামের মৃত মালেক সরদারের ছেলে। তিনি এলাকায় সালিসের মাতব্বর ও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সংঘর্ষে আরও পাঁচ থেকে ছয়জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ এক ব্যক্তিকে আটক করেছে। তবে তাঁর নাম–পরিচয় জানায়নি পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে মেরাতলী গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী জাহের মিয়া, তাঁর ছেলে বাহার মিয়া ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। সেই ঝগড়ার ঘটনা মুঠোফোনে ভিডিও করেন একই গ্রামের সফর আলীর ছেলে রিফাত মিয়া। এ নিয়ে রিফাতের সঙ্গে জাহের ও বাহারের ঝগড়া হয়। বিষয়টি মীমাংসা করতে গতকাল এশার নামাজের পর জাহেরের বাড়িতে সালিস ডাকা হয়। সালিসে গ্রামের মাতব্বর হিসেবে পরিচিত শাহ আলম, তাঁর ভাই মাহবুব, মাহবুবের ছেলে জিহাদ, স্থানীয় সাইদুর রহমান, আনিস মিয়া, জিয়া মিয়া, রিফাতের বাবা সফর আলী ও তাঁর ভাই আরাফাত মিয়া উপস্থিত হন। কিন্তু সালিসে রিফাত উপস্থিত হননি।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, সালিসের শুরুতে রিফাতের অনুপস্থিতির কারণ জানতে চান শাহ আলম। এ নিয়ে সফর আলী, সাঈদুর ও আরাফাতের সঙ্গে শাহ আলমের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। তখন সফর আলীর মেয়ে ও স্ত্রী শাহ আলম, মাহবুব, জিহাদের চোখে মরিচের গুঁড়া ছুড়ে মারেন। একপর্যায়ে রিফাতসহ কয়েকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান। তখন শাহ আলমের লোকজনও হামলায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় চোখে বল্লমের আঘাত পেয়ে শাহ আলম গুরুতর আহত হন। গুরুতর আহতাবস্থায় তাঁকে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল এবং অবস্থার অবনতি হলে শহরের নিউ ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে মধ্যরাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। সংঘর্ষে শাহ আলমের ভাই মাহবুব, ছেলে জিহাদ, প্রতিপক্ষের রিফাতসহ পাঁচ থেকে ছয়জন আহত হয়েছেন।

নিহতের চাচাতো ভাই কামাল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, শাহ আলমের বাঁ চোখ ও মাথায় বল্লমের আঘাত লাগে। তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। স্বজনেরা লাশ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় এক সালিস হয়। মূল অভিযুক্ত সালিসে উপস্থিত না হওয়ায় গ্রামের মাতব্বর বিষয়টি জানতে চান। এ নিয়ে তাঁরা মাতব্বরের ওপর ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে সফর আলীর স্ত্রী ও মেয়ে মরিচের গুঁড়া ছুড়ে মারেন। পরে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। রিফাত নামের একজন গুরুতর আহত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সফর আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও বন্ধ পাওয়া যায়।

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বল্লমের আঘাতে আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হবে। এই ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে কোনো মামলা হয়নি।