সরু সড়ক, তা–ও ভাঙাচোরা চরম ভোগান্তি বাসিন্দাদের

অলিগলিগুলো খুবই সরু, দুটি রিকশা পাশাপাশি চলা কঠিন। এরপর সড়ক কাটা থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেশি।

খুলনা নগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের টুটপাড়া মেইন রোডের এক পাশ এভাবে খুঁড়ে রাখা হয়েছে দুই মাসের বেশি সময় ধরে। এতে একদিকে যেমন নোংরা পানিতে পরিবেশদূষিত হচ্ছে, অন্যদিকে মশা জন্ম দিচ্ছে। গত সোমবার
ছবি: প্রথম আলো

খুলনা সিটি করপোরেশনের খানজাহান আলী সড়কের উত্তর দিক দিয়ে চলে গেছে টিবি ক্রস রোড। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওই সড়কের উত্তর দিকের শেষ প্রান্ত গিয়ে মিশেছে সাউথ সেন্ট্রাল সড়কে। সড়ক বন্ধ রেখে সেখানে চলছিল ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি। এলাকাবাসী জানান, ৮ থেকে ১০ মাস এভাবে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছে ওয়াসা। বেশ কয়েকটি সড়কে কাজ গত এক সপ্তাহ হলো শেষ হলেও দুর্ভোগ রয়ে গেছে অলিগলির সড়কে। প্রায় প্রতিটি গলিই ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ভাঙাচোরা।

২৯ নম্বর ওয়ার্ডটি মূলত খুলনার পুরোনো শহর এলাকা। তবে বর্তমানে নতুন নতুন বহুতল ভবন হচ্ছে। ২২ মে এলাকা ঘুরে ও মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়াসার পয়োনিষ্কাশনের পাইপ বসাতে গিয়ে তছনছ হয়ে গেছে অধিকাংশ সড়ক। যত্রতত্র সড়ক খুঁড়ে পাইপ ও ম্যানহোল নির্মাণ করায় প্রধান সড়কগুলো বেহাল। 

২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তৃতি বাবু খান রোড থেকে রূপসা স্ট্যান্ড রোড, খানজাহান আলী সড়ক থেকে সাউথ সেন্ট্রাল রোড পর্যন্ত। এর দক্ষিণে খানজাহান আলী মহাসড়ক ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড, উত্তরে সাউথ সেন্ট্রাল সড়ক ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, পশ্চিমে বাবুখান সড়ক ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড, পূর্বে রূপসা স্ট্যান্ড রোড ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের জনসংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার, ভোটার ১৩ হাজার ১৫৬ জন।

এই ওয়ার্ডে খুলনার সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা, সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয়, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয় ও দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, অলিগলিগুলো খুবই সরু, দুটি রিকশা পাশাপাশি চলা কঠিন। এরপর সড়ক কাটা থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেশি। প্রায় বাড়িতে ওয়াসার পানির সংযোগ থাকায় পানির সংকট কম।

এলাকাবাসী জানান, বাড়ি করতে গিয়ে জমি ছেড়ে না দেওয়ায় অলিগলি সরু হয়ে পড়েছে। এ কারণে অ্যাম্বুলেন্স বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারে না, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও কোনো গলিতে ঢোকার মতো অবস্থা নেই। মাদক ও মশা ছাড়া এলাকায় তেমন কোনো সমস্যা নেই। বাড়িতে এসে ময়লা নিয়ে যায়, ড্রেনও নিয়মিত পরিষ্কার করে। তবে কিছু কিছু এলাকায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

বর্তমান কাউন্সিলর খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকির সাইফুল ইসলাম এবারও নির্বাচন করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওয়ার্ড থেকে মাদক ও সন্ত্রাস অনেকটাই নির্মূল হয়েছে। কিছু কিছু এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। করোনার কারণে পুরো কাজ করা সম্ভব হয়নি।

৩০ নম্বর ওয়ার্ড মশার আখড়া

লম্বা-সরু গলি, কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া গলির মাঝবরাবর প্রায় দেড় ফুট চওড়া মাপের লম্বা কাটা। সড়কের দুই ধারে বাড়ির দেয়াল যেন চেপে ধরতে চাইছে গলিকে। পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা নাজুক। নর্দমার পানি উঠে আসছে সড়কে। এটি ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কলাগাছিয়া পাড়ার চিত্র। ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটি অলিগলির চিত্র প্রায় একই। ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে সড়কগুলোর অবস্থা আরও নাজুক।

কলাগাছিয়া পাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ মুন্না হাসান বলেন, এলাকার মানুষ কেউ জমি ছাড়তে চান না, এ কারণে সড়কগুলো এতটা সরু। বৃষ্টি হলেই পানি যাওয়ার জায়গা থাকে না। বেশ কয়েক দিন ধরে জলাবদ্ধতা থাকে। অনেক সময় নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়লে তা এসে ডুবিয়ে দেয় সড়কগুলো। এমনকি মানুষের ঘরেও পানি ওঠে যায়।

নগরের বড় ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে ৩০ নম্বর একটি। টুটপাড়া কবরস্থান থেকে রূপসা ট্রাফিক মোড়, মতিয়াখালী স্লুইসগেট থেকে মহিরবাড়ি খালপাড় পর্যন্ত এর সীমানা। ওয়ার্ডের উত্তরে খানজাহান আলী সড়ক, দক্ষিণে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড। পূর্বে রূপসা নদী ও পশ্চিমে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থান। ওয়ার্ডে জনসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার, ভোটার ২৬ হাজার ১০৯।

ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ, আনসার ভিডিপির কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়, টুটপাড়া কবরস্থান, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর, খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল ও কেসিসি উইমেন্স কলেজ, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয়, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ও বাংলাদেশ ম্যাচ ফ্যাক্টরি।

এই ওয়ার্ড ঘুরে ও মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো ডাস্টবিন নেই। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলছে মানুষ। অল্প বৃষ্টিতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। মশার উৎপাত বেশি। বেশির ভাগ ছোট সড়কে বাতি বিকল থাকে। মাদকের ব্যাপক বিস্তার রয়েছে। এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এলাকায় মশার উৎপাত সবচেয়ে বেশি। 

বর্তমান কাউন্সিলর এস এম মোজাফফর রশিদী প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার কাজ হচ্ছে, এ কারণে মশার উৎপাত বেশি। ডাস্টবিন না থাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায় না।