সহপাঠীর গায়েহলুদে নাচে-গীতে মুখর বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস

গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে কনে অনন্যা দাশের সঙ্গে তাঁর সহপাঠীরা। সোমবার রাতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে
ছবি: প্রথম আলো

শরতের দুপুরে মেঘ, বৃষ্টি আর রোদের লুকোচুরি। টিপ টিপ করে ঝরতে থাকা বৃষ্টির ছাট হাওয়ায় উড়ে এসে পড়ছে চোখেমুখে। এরই মধ্যে একদল শিক্ষার্থী সবুজের মধ্যে হলুদের আভা ছড়িয়ে নাচে–গানে আনন্দে মেতে উঠেছেন। শিক্ষকেরাও শামিল হয়েছেন তাঁদের সঙ্গে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসে গতকাল সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এ দৃশ্যের দেখা মেলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থী অনন্যা দাশের বাড়ি খুলনায়। তাঁর বিয়ে অক্টোবর মাসে। বন্ধুরা সবাই খুলনায় বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না। এ কারণে ক্যাম্পাসেই তাঁর গায়েহলুদের আয়োজন করেন বন্ধু–সহপাঠীরা।

এমন আয়োজনে মুগ্ধ কনে অনন্যা দাশও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসঙ্গে এত দিন যাদের সঙ্গে পথ চলা, কত হইহুল্লোড়, হাসি–ঠাট্টা, তাদের ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। এর মধ্যে বিয়ের বিষয়টিও চলে এল। বন্ধুদের অনেকে খুলনায় গিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবে না। এ কারণে ওরা চমৎকার এ আয়োজন করেছে। খুব ভালো লাগছে আমার।’

ক্যাম্পাসের একটি ভবনের সামনে সাইকেলের গ্যারেজে সাজানো হয় ব্যাকড্রপ। কনেকে ঘিরে বন্ধু–সহপাঠীরা মেতে ওঠেন আনন্দ–উল্লাসে। কনের বান্ধবীরা পরেন হলুদ শাড়ি। ছেলেদেরও ছিল পরিপাটি সাজ।

দলবেঁধে সবাই গাইছিলেন বিয়ের গীত—‘হলদি না হলদি রে, কায় বাটপে হলদি, দাদি আছে দরদি রে, তায় বাটবে হলদি’ বা ‘হলদি বাটো, মেন্দি বাটো’। এমন সব গীত আর কলহাস্যে কখন যে রাত নয়টা বেজে যায় টেরই পান না তাঁরা।

গানের পাশাপাশি কনেকে ঘিরে চলে নাচ। কনের সহপাঠী নাজমুল হুদা, লুবনা হক, আয়েশা মীম, ওবায়দুল্লাহ আতিক, ফয়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ চিন্তা থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া, যা মুহূর্তে সহপাঠীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। একে একে প্রিয় শিক্ষকেরাও যুক্ত হন। এমন আয়োজন মনে থাকবে।

হলুদ উৎসবে দেখা মিলল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ নিমন্ত্রণ পেলাম। কনের বন্ধু-সহপাঠীদের উদ্যোগে করা এমন একটি চমৎকার আয়োজনে যুক্ত হতে পেরে আনন্দ লাগছে।’

লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধান আসাদুজ্জামান মণ্ডলও এসেছেন গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে। নিজ বিভাগের শিক্ষার্থী কনেকে আশীর্বাদ করেছেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘কনে তো আমার ছাত্রী। সে হিসেবে ক্যাম্পাসে আমি তাঁর অভিভাবক। আর এমন সুন্দর আয়োজন। না এসে পারা যায়?’