করোনা পরীক্ষার কিটের সংকট কেটেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের নানা প্রস্তুতি

করোনা পরীক্ষাফাইল ছবি

যশোরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক দিনে দুজনের মৃত্যুতে জনমনে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জেলায় করোনা পরিস্থিতি এখনো খারাপ নয়। মারা যাওয়া দুজন অন্য শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সংকটের মধ্যে করোনা পরীক্ষার জন্য কিছু কিট পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার সকালে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যু হয় শেখ আমির হোসেন (৬৮) নামের এক ব্যক্তির। বুধবার রাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মনিরামপুর উপজেলার মাহমুদকাঠি গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ হোসেন (৪২)। তিনিও যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজন রোগী এই হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৬ জুন পেটের ব্যথা নিয়ে আমির হোসেন হাসপাতালে ভর্তি হন। শ্বাসকষ্ট হওয়ায় গত মঙ্গলবার তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হয়। তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। বুধবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ইউসুফ হোসেন শ্বাসকষ্ট ও কিডনির সমস্যা নিয়ে ১৩ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁকে মেডিকেল ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছিল। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৪ জুন হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। কিন্তু রোগীর শরীরে অক্সিজেন লেভেল কমতে শুরু করলে চিকিৎসকেরা র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার পরামর্শ দেন। বুধবার দুপুরে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। রাতে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে রোগীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। চিকিৎসকেরা করোনার চিকিৎসা শুরু করার আগেই রাতে তিনি মারা যান।

আরও পড়ুন

নতুন করে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা রেড জোনে ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের ইয়েলো জোনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে (রেড জোন) তিনটি কেবিন প্রস্তুত করে রাখা রয়েছে। যেখানে ছয়জন রোগী একসঙ্গে থাকতে পারবেন। এ ছাড়া ১০ শয্যার আইসিইউ খালি করা হয়েছে। হাসপাতালের ৩০টি শয্যার আইসোলেশন ইউনিটের (ইয়েলো জোন) ১৫টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, মারা যাওয়া ওই দুজনই হাসপাতালে সাধারণ রোগী হিসেবে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। তাঁদের একজনের পেটের ব্যথা তীব্র ব্যথা ও সঙ্গে শ্বাসকষ্ট এবং অন্যজনের শ্বাসকষ্ট ও কিডনির সমস্যা ছিল।

জেলায় করোনা পরীক্ষার কিটের ঘাটতি থাকায় সন্দেহভাজন রোগীদের এতোত বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালের র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা ওপর নির্ভর করতে হচ্ছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার করোনা পরীক্ষার দুই হাজার কিট পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হুসাইন শাফায়েত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন থেকে হাসপাতালে হাসপাতালে কোভিড পরীক্ষা হবে। হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তিনটি কেবিন প্রস্তুত করে রাখা রয়েছে। এ ছাড়া ১০ শয্যার আইসিইউ খালি করা হয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সগুলোতেও নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যশোরের সিভিল সার্জন মো. মাসুদ রানা বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলার আটটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের স্বাস্থ্য পরীক্ষাকেন্দ্রে করোনার র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ১২ হাজার কিটের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। দেশে কিটের সংকট রয়েছে। তারপর কিছু কিট দ্রুত পাওয়া যেতে পারে। পরীক্ষার জন্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) আরটিপিসিআর ল্যাব নতুনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। তিন থেকে চার দিনের মধ্যে সেই ল্যাবে কোভিড পরীক্ষা শুরু করতে পারবেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

জেলার করোনা পরিস্থিতি খারাপ না, দাবি করে সিভিল সার্জন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যে দুইজন মারা গেছেন, তাঁদের অন্য শারীরিক সমস্যা ছিল। তাঁরা যে করোনায় মারা গেছেন, এটা বলা যাবে না।’

আরও পড়ুন