চার পুরুষের ঘণ্টা বাজানোর কাজে ইতি, ঘোড়ার গাড়িতে রাজসিক বিদায়

কর্মজীবনের শেষ দিন ব্যান্ড বাজিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে করে রাজকীয় সংবর্ধনায় বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী নুরুল আবছারকে। ছবিটি আজ দুপুরে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তোলাছবি: প্রথম আলো

প্রপিতামহ বাদশা মিয়ার হাতে প্রথম বেজেছিল জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের ঘণ্টা। কালক্রমে পিতামহ ছেরাদুল হক ও বাবা মুন্সী মিয়ার হাত ঘুরে এই দায়িত্ব বর্তায় নুরুল আবছারের কাঁধে। তাঁর হাতেই ইতি ঘটল পরিবারের চার পুরুষের হাতে শতবর্ষী বিদ্যালয়টির ঘণ্টা বাজানোর কাজের। সেই নুরুল আবছারকে কর্মজীবনের শেষ দিন রাজকীয় সংবর্ধনার মাধ্যমে বিদায় দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রাজসিক পোশাকে ব্যান্ড বাজিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুরে জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের আশপাশের হাজারো মানুষ সাক্ষী হয়েছেন এমন দৃশ্যের।

এমন জাঁকজমকপূর্ণ বিদায়ের অনুভূতি জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী নুরুল আবছার বলেন, ‘১৯৮৪ সালে ৫২০ টাকা বেতনে অফিস সহকারী পদে চাকরি শুরু করে আজ কর্মজীবন শেষ করেছি। আমার বাবা, দাদা, দাদার বাবাসহ চার পুরুষ ধরে এই বিদ্যালয়ে ঘণ্টা বাজানোর কাজ করেছি আমরা। আমার ছেলে আর এ পেশায় না আসায় এখানে শেষ হয়েছে দীর্ঘ এ যাত্রার। সকালে আমার বাজানো ঘণ্টাধ্বনিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হুড়মুড়িয়ে ক্লাসে ঢুকছে আবার বিকেলে ছুটির ঘণ্টা বাজলে হুড়াহুড়ি করে বের হয়ে বাড়ির পথ ধরছে, এ দৃশ্য আমাকে খুব আনন্দ দিত। বিদ্যালয়ের দেড় হাজার শিক্ষার্থী ছিল আমার আত্মার আত্মীয়। আজ বিদায়বেলায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যে সম্মান দেখিয়েছে, এটি আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া।’

ঘোড়ার গাড়িতে বিদায় নিচ্ছেন নুরুল আবছার। ছবিটি আজ দুপুরে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলার প্রাচীন এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯১৪ সালে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন নুরুল আবছারের প্রপিতামহ বাদশা মিয়া। তাঁর বিদায়ের পর যুক্ত হন তাঁর দাদা ছেরাদুল হক, এরপর এ দায়িত্ব পান নুরুল আবছারের বাবা মুন্সী মিয়া। তাঁর চাকরির মেয়াদকাল শেষে এ দায়িত্বে স্থলাভিষিক্ত হন নুরুল আবছার। ১৯৮৪ সালে কাজে যোগ দিয়ে আজ কর্মজীবনের সফল ইতি টেনেছেন তিনি। আমরা ছাত্র-শিক্ষকেরা নুরুল আবছারকে যথাযোগ্য সম্মানে বিদায় দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এক পরিবারের ৪ পুরুষ ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে একটি বিদ্যালয়ের ঘণ্টা বাজানোর দায়িত্ব পালন করার বিষয়টি বেশ বিরল।’

অফিস সহকারী নুরুল আবছার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক—সবার প্রিয় ছিলেন বলে জানান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য আবু সুফিয়ান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘তাঁরা চার পুরুষ ধরে এই বিদ্যালয়ের সেবা দিয়ে গেছেন। আজ শেষবারের মতো ঘণ্টা বাজিয়ে কর্মজীবনের ইতি টেনেছেন নুরুল আবছার। আমরা তাঁর কাজের যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে চেষ্টা করেছি।’