জবানবন্দির বরাত দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক (এসাঅই) খবির হোসেন বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে সুমিতা তাঁর একমাত্র সন্তান নকিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রোহিত দত্তকে (১১) নিয়ে স্থানীয় কলেজশিক্ষক মনোরঞ্জন রায়ের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। কালীগঞ্জ উপজেলার মৌতলা বাজারের একজন কসমেটিক ব্যবসায়ীর কাছে সাড়ে তিন লাখ টাকা সুদে খাটাতেন সুমিতা। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে সুদে টাকা খাটিয়েছেন তিনি। গত বুধবার সুমিতা মৌতলা বাজারে ওই কসমেটিক ব্যবসায়ীর কাছে সুদের টাকা আনতে গেলে তিনি টাকা দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। আরও কয়েকজনের কাছ থেকে তিনি টাকা আদায় করতে পারছিলেন না। ফলে ছেলের পড়াশোনার খরচ, ঘরভাড়া ও সংসার চালানো নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েন। হতাশা ও দুশ্চিন্তার একপর্যায়ে শুক্রবার দুপুরে ম্যাঙ্গো জুসের সঙ্গে ২৬টি ঘুমের বড়ি ও কীটনাশক মিশিয়ে রোহিতকে পান করান। এতে রোহিত মারা যায়। সুমিতার বাড়ি থেকে ঘুমের বড়ির স্ট্রিপ, কীটনাশকের পাতা ও দুটি জুসের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। অভাবের তাড়নায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ছেলে রোহিতকে হত্যার করেছেন বলে আদালতে স্বীকার করেন সুমিতা।

শুক্রবার রাতে শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রাম থেকে সুমিতা দত্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে দুপুরে উপজেলার নকিপুর (হরিতলা) গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় নিহত রোহিতের মেজো কাকা উজ্জ্বল কুমার দত্ত বাদী হয়ে সুমিতা দত্তের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিনজনের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় গতকাল রাতে হত্যা মামলা করেন। মামলার পর রাতেই সুমিতা দত্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহ অপর দুজনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

উজ্জ্বল কুমার দত্ত মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গতকাল বেলা দেড়টার দিকে সুমিতা দত্ত তাঁকে (উজ্জ্বলকে) মুঠোফোনে জানান, রোহিত খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সে কথা বলছে না। তিনি (সুমিতা) রোহিতকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন। পরে তিনি (উজ্জ্বল) শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখেন, রোহিত জরুরি বিভাগের শয্যায় শোয়া। তাঁর সামনেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক জানালেন, রোহিত মারা গেছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গোপাল দত্ত তিন বছর আগে মারা যাওয়ার পর স্থানীয় নকিপুর গ্রামের কলেজশিক্ষক মনোরঞ্জন মণ্ডলের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন সুমিতা দত্ত। এ সময় তিনি কয়েকজনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এসব কারণে প্রায় রোহিতকে মারধর করেন সুমিতা। রোহিতের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে উজ্জ্বল কুমার দত্ত বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ রোহিতের মা অভিযুক্ত সুমিতা দত্তকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে সুমিতা দত্ত জুসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে নিজ সন্তানকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, উজ্জ্বল দত্ত মৌখিকভাবে অভিযোগ করলে রোহিতের মা সুমিতা দত্তকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, তাঁর ছেলেকে তিনি জুসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে হত্যা করেছেন। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জুসের বোতল ও বিষের প্যাকেটও উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার লাশটির ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর গ্রেপ্তার সুমিতাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।