অভিযানের পর পেঁয়াজের খোসাও নেই বাজারে

চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ভোক্তা অধিকারের অভিযানের সময় দোকানিকে ন্যায্য দামে পেঁয়াজ বিক্রির নির্দেশ দেন। এ সময় ক্রেতারা লাইন ধরে ১২০ টাকায় পেঁয়াজ কেনে। আজ বেলা ২টায়ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম নগরের চৌমুহনী এলাকায় অবস্থিত চউক কর্ণফুলী মার্কেট বাজার। বাজারের আশপাশের অন্তত তিন থেকে চার কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দারা বাজার করেন এ বাজার থেকে। আজ শনিবার সকালে এ বাজারের প্রতিটি দোকানে ছিল ঝুড়িভর্তি পেঁয়াজ। প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ২১০ থেকে ২২০ টাকা।

এক দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। তাই এ বাজারে আজ বেলা ১১টার দিকে অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

তবে অভিযান শেষ হতেই বাজারে সেই ঝুড়িভর্তি পেঁয়াজ আর দেখা গেল না। বেলা তিনটার দিকে এই বাজারে গিয়ে অন্তত ১৫টি মুদিদোকান ঘুরে দেখা গেল, একটি দোকানেও পেঁয়াজ নেই। নেই পেঁয়াজের খোসাও। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বক্তব্য দিতে রাজি হননি কোনো ব্যবসায়ী।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রানা দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, সকালে সব দোকানেই পেঁয়াজ ছিল। আজ সকালে অভিযানের পর মজুত থাকা পেঁয়াজ সরিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।  

ভারত সরকার নিজের দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আগামী মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে এমন খবর আসার পর থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়াতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।

প্রায় দ্বিগুণ পেঁয়াজের দাম

ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার খবর আসতেই গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়াতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম নগরের পাঁচটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র এক দিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে পেঁয়াজের দাম। আজ বিকেলে নগরের পাহাড়তলী, ঝাউতলা, বহদ্দারহাট, চকবাজার ও রিয়াজউদ্দিন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে গতকাল শুক্রবার পেঁয়াজের খুচরা দাম ছিল প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা। এ ছাড়া পাইকারি মূল্য ছিল ১১০ থেকে ১১২ টাকা। এক দিনের ব্যবধানে একই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। অর্থাৎ খুচরা মূল্যে দাম বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। আর পাইকারিতে তা প্রায় দ্বিগুণ।

জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামে আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আগামী মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এমন নিষেধাজ্ঞায় গতকাল দুপুর থেকে বাজার অস্থির। ভোক্তা অধিকার আজ অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত দামে যাঁরা বিক্রি করছিলেন, তাঁদের জরিমানা করেছে।  

অভিযানের সময় ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা পেঁয়াজের ক্রয়মূল্যের রসিদ পরীক্ষা করেন। আজ বেলা ২টায় খাতুনগঞ্জে
ছবি: সৌরভ দাশ

সরবরাহে ঘাটতি নেই

আজ দুপুর ১২টার দিকে নগরের ঝাউতলা বাজারের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় সব দোকানেই পর্যাপ্ত পেঁয়াজের মজুত আছে। দোকানগুলোতে ভ্যান থেকে পেঁয়াজ নামানো হচ্ছিল। অনেক দোকানে ২০ থেকে ৫০ বস্তা পেঁয়াজও দেখা গেছে। তবু অস্বাভাবিক দাম হাঁকছিলেন বিক্রেতারা। দোকানগুলোতে তিন দামে তিন ধরনের পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায়। বড় আকারের আমদানি করা চীনের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ১৭০ টাকায়, আমদানি করা মাঝারি আকারের ভারতীয় পেঁয়াজ ১৮০ টাকায় আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ২২০ টাকায়।

নগরের ফয়’স লেক এলাকার বাসিন্দা রানা রহমান পেঁয়াজ কিনতে এসেছিলেন এই বাজারে। তিনি বলেন, গত সপ্তাহেও ১১০ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছেন। আর আজ এসে দেখছেন পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ। তিন কেজি পেঁয়াজ কেনার ইচ্ছা থাকলেও তিনি ১৭০ টাকার চীনা পেঁয়াজ কিনেছেন আধা কেজি। এমন দাম থাকলে পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করতে হবে বলে আক্ষেপ করেন এই ক্রেতা।  

অভিযানে টাকা ফিরে পেলেন দোকানি

চট্টগ্রাম নগরের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ এলাকায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান শুরু করে দুপুর ১২টার দিকে। এ সময় অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে চলে যান। অনেকে পেঁয়াজের বস্তা শ্রমিক দিয়ে সরিয়ে নেন। অভিযানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ কে ট্রেডার্সসহ চারটি আড়তে অভিযান চালায়।

অভিযানের সময় ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা দেখতে পান, ক্রয়মূল্য কম হলেও পেঁয়াজ মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করছিলেন আড়তদারেরা। এ কারণে এ কে ট্রেডার্সসহ আরও চারটি আড়তকে মোট এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযানের সময় ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা পেঁয়াজের ক্রয়মূল্যের রসিদ পরীক্ষা করেন। আজ বেলা ২টায় খাতুনগঞ্জে
ছবি: সৌরভ দাশ

এ সময় আড়তে থাকা পেঁয়াজগুলো ১২০ টাকা দরে বিক্রির ঘোষণা দেন কর্মকর্তারা। তখনই প্রায় শ খানেক ক্রেতা ছুটে আসেন পেঁয়াজ কিনতে। আড়তের সামনে লম্বা লাইন তৈরি হয় ক্রেতাদের। তাঁদের একজন নগরের ইপিজেড এলাকার ক্ষুদ্র দোকানি মোহাম্মদ মোবারক উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সকালে ২০০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। এখন ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।’

এ সময় তিনি সকালে পেঁয়াজ কেনার রসিদ দেখান কর্মকর্তাদের। কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তাঁকে ১২০ টাকা কেজি দরে হিসাব করে বাকি টাকা ফেরত দেওয়া হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, পেঁয়াজের দাম কেনা দামের চেয়ে বেশি যাঁরা রেখেছেন, তাঁদের জরিমানা করা হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান অব্যাহত থাকবে।