চুয়াডাঙ্গায় সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে স্থাপিত হয়নি মাতৃদুগ্ধ কর্নার

শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে মায়ের দুধের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই বার্তা পৌঁছে ‘মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ পালিত হচ্ছে। অনেক স্থানে মাতৃদুগ্ধ কর্নার গড়ে ওঠেনি।

চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে মাতৃৃদূগ্ধ পান কর্নার। গতকাল দুপুর তোলা ছবি।
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গায় সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও জনসমাগম হয়—এমন জায়গায় ‘মাতৃদুগ্ধ  কর্নার’সহ উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় শিশুকে বুকের দুধ পান করাতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন মায়েরা। এতে কর্মজীবী মায়েদের পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে শিশুসন্তানকে নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হওয়া নারীরা হচ্ছেন বিব্রত। খিদের সময় শিশুরা বুকের দুধ থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। এতে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশও ব্যাহত হচ্ছে।

মা ও শিশুবিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের কোনা বিকল্প নেই। শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে মায়ের দুধের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই গুরুত্ব ও সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে ১ থেকে ৭ আগস্ট ‘মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘কর্মজীবী মা-বাবার সহায়ক পরিবেশ গড়ি, মাতৃদুগ্ধ পান নিশ্চিত করি’।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি কনসালট্যান্ট আকলিমা খাতুন বলেন, মায়ের দুধপানে মা ও শিশুর দুজনেরই লাভ। এ জন্য নবজাতক ভূমিষ্ঠের পর তাকে মায়ের কোলে দিতে হবে। শিশুকে শালদুধ খাওয়ালে মায়ের গর্ভফুল দ্রুত পড়ে যাবে। রক্তক্ষরণ কমে আসবে। জরায়ু দ্রুত আগের অবস্থায় চলে যাবে এবং টানা দুই বছর দুধ পান করানোর সময় মাসিকের ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবেন।

আকলিমা খাতুন বলেন, শিশুর মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধি এবং পুষ্টির জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মায়ের বুকের দুধ। এই দুধ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় শিশুর উপযোগী করে সৃষ্টিকর্তার তৈরি। জন্মের পর ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এরপর ছয় মাস বয়স থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পানের সঙ্গে অন্যান্য খাবার খাওয়াতে হবে। এতে মা-সন্তানের বন্ধনটা ভালো হবে। শিশুটি রোগবালাই থেকে রক্ষা পাবে।

মাতৃদুগ্ধ কর্নার চালুর জন্য হাইকোর্টের নির্দেশ

শিশুকে বুকের দুধ পান করানো নির্বিঘ্ন করতে কর্মস্থল, পাবলিক প্লেস, সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে মাতৃদুগ্ধ বা ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনে নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ চলতি বছরের ২ এপ্রিল এ রায় দেন। জনস্বার্থে ৯ মাস বয়সী শিশু উমাইর বিন সাদী ও তার মা আইনজীবী ইশরাত হাসানের দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে এ রুল জারি করেন আদালত।

  শুক্রবার সকালে শহরতলি দৌলাতদিয়াড় বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, এক বছর বয়সী একটি শিশু অনবরত কেঁদেই চলেছে। দোকান থেকে এটা–সেটা কিনে দিলেও থামছে না। কারণ বুঝতে পেরে শিশুটির মা শিশুটিকে নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের পেছনের একটি বাড়িতে যান এবং ১০ মিনিট পর ফিরে আসেন। শিশুটির বাবা মেহেরপুরের টিপু সুলতান জানান, শিশুটি ক্ষুধায় কাঁদছিল।

পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে শিশুটির মা বলেন, ‘অনেক কর্মস্থলে বা বাস, রেলস্টেশনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার না থাকায় মায়েদেরকে আমার মতো ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নিরাপদ পরিবেশের অভাবে ও যৌন হয়রানির ভয়ে মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ পান করাতে পারেন না। যা খুবই কষ্টকর।’

জেলা তথ্য কর্মকর্তা শিল্পী মণ্ডল দাবি করেন, গ্রামের নারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব ও কাজের ব্যস্ততায় অনেকেই শিশুকে ঠিকমতো দুধ পান করান না। আবার চাকরিজীবী নারীদের বাচ্চার দুধ খাওয়ানোর নির্দিষ্ট জায়গা নেই। লজ্জার কারণে অনেকেই শিশুকে বুকের ধুধ খাওয়াতে চান না।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) শারমিন আক্তার ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, ‘অবকাঠামোগত কিছু অসুবিধা আছে। অনুকূল পরিবেশ না থাকায় দীর্ঘ সময় বাচ্চাদের বুকের দুধ না দিয়ে রাখতে হয়। আমি মনে করি প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে, যেখানে কর্মজীবী নারীরা রয়েছেন, সেখানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার চালু হওয়া প্রয়োজন। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক স্যার উদ্যোগ নিয়েছেন। ডিসি অফিস চত্বরে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের জন্য জায়গাও নির্বাচন করা হয়েছে।’