ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ

প্রতিবছরই তাঁরা এভাবে টাকা নেন। গত বছর ১৫০ টাকা নিলেও এ বছর তা ২০০ টাকা করা হয়েছে।

রংপুর জেলার মানচিত্র

রংপুরের তারাগঞ্জে এসএসসি ও দাখিলের ব্যবহারিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের কাছে টাকা আদায় যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৪৩ জন, তারাগঞ্জ ও/এ বালিকা স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে ৪৩৬ জন এবং তারাগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ১৮৫ জন এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। ১৬ মার্চ এসব কেন্দ্রে ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয়। শেষ হবে ২০ মার্চ।

গতকাল সোমবার তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ ও জীববিজ্ঞান এবং মানবিক বিভাগের কৃষি শিক্ষা বিষয়ের ওপর ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। সেখানে কথা হলে অন্তত ১০ শিক্ষার্থী জানায়, প্রতি বিষয়ে ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। যারা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, তাদের নম্বর কম, ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। অনেকে বন্ধুদের কাছে ধারদেনা করে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাছে ২০০ টাকা করে জমা দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের জানিয়েছেন, ১০০ টাকা কেন্দ্র খরচ ও ১০০ টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডের জন্য নিচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কেন্দ্রের দুজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলে, টাকা না দেওয়ায় সকালে তাদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। পরে ব্যবহারিক পরীক্ষার দায়িত্বরত শিক্ষককে ২০০ টাকা করে দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয় তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বরত এক সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘ভাই, টাকা আমরাও বাচ্চাদের কাছ থেকে নিতে চাই না। অনেক বিষয় থাকে, তাই বাধ্য হয়ে নিতে হয়।’

তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রের কেন্দ্রসচিব মুসা সরকার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। যিনি টাকা নেবেন, তাঁকেই এর দায় নিতে হবে। আমরা কোনো টাকার ভাগ নেই না।’

ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তারাগঞ্জ ও/এ বালিকা স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে ও তারাগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রেও। এই দুই কেন্দ্রে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিষয়প্রতি ২০০ টাকা করে ব্যবহারিক পরীক্ষার দিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনার জন্য আগেই বলা হয়। কেউ যদি ১০-২০ টাকা কম দিতে চায়, তাও নেন না শিক্ষকেরা। প্রতিবছরই তাঁরা এভাবে টাকা নেন। গত বছর ১৫০ টাকা নিলেও এ বছর তা ২০০ টাকা করা হয়েছে।

যোগযোগ করা হলে তারাগঞ্জ ও/এ বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্রের কেন্দ্রসচিব সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কেন্দ্রে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিলেও নিতে পারে। আমাদের টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি আমাদের নাম ব্যবহার করে, তাহলে তো করার কিছু নেই।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষায় টাকা আদায় সম্পূর্ণ অবৈধ। এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অবশ্যই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’