এবার ভাঙনে বিলীন কমিউনিটি ক্লিনিক 

এক মাস ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহে চর ভগবতীপুরের প্রায় ৪০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদে ভেঙে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন। গতকাল কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ভগবতীপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিক ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এক মাস থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়তে শুরু করলে ওই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক মাস থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়তে শুরু করলে চর ভগবতীপুরে ভাঙন শুরু হয়। গত দুই সপ্তাহে চর ভগবতীপুরের প্রায় ৪০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। ভাঙনের কারণের চর ভগবতীপুরের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকটি রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার রাতে ক্লিনিকটি ব্রহ্মপুত্র নদে ভেঙে পড়ে। কমিউনিটি ক্লিনিকটি নুনখাওয়া, প্রথম আলো চর, রসুলপুর, বারোবিশ, ভগবতীপুর, পোরারচরসহ আশপাশের ১২টি চরের একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক ছিল। এ ছাড়া ভাঙনের কারণে চরের একটি মসজিদ ও একটি আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছে। 

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, পাউবো ও স্বাস্থ্য বিভাগ চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করতে পারেনি। নদের ভাঙন ঠেকাতে প্রায় চার হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ক্লিনিকটি নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করার বিষয়ে তিনি বলেন, গত শনিবার ক্লিনিকের অবকাঠামো বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের মূল্য ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু দরপত্রে কেউ অংশ নেননি। 

চর ভগবতীপুরের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান (৩০) বলেন, ‘পাউবো ম্যালা জিও ব্যাগ ফেলছে। কিন্তু ভাঙন ঠেকপার পায় নাই। ম্যালা বাড়ি ভাঙ্গি নিছে। চোখের সামনোত ক্লিনিকটা নদীর পানিত ডুবি গেইল। হামারা কিছুই করার পারলং না। এল্যা জ্বর হইলে হামার কাইমত (শহরে) যাওয়া ছাড়া আর উপেয় নাই।’

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, যাত্রাপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকায় চর। সেখানে স্বাস্থ্যসেবার মান খুবই নাজুক। কমিউনিটি ক্লিনিক চরের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসার জায়গা ছিল। এর মাধ্যমে যাত্রাপুর ইউনিয়ন ও নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের প্রায় ১২টি চরের কয়েক হাজার মানুষ পেতেন।

চর ভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি রাশেদুল বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকটিতে আশপাশের ১২টির বেশি চরের ৬ হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসা নিতেন। এটি চরের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ভরসাস্থল। এখন চরের কোনো বাড়িতে অস্থায়ীভাবে সেবা দিতে হবে।

কুড়িগ্রাম পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ইসমত ত্বোহা বলেন, পাউবো সাধারণত কোনো দ্বীপচরে প্রতিরক্ষামূলক কাজ করে না। কিন্তু চর ভগবতীপুরে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকায় জেলা প্রশাসকের অনুরোধে সেখানে অস্থায়ীভাবে প্রতিরক্ষামূলক কিছু কাজ করা হয়েছে। প্রায় চার হাজার জিও ব্যাগ ফেললেও ব্রহ্মপুত্রের স্রোতের কাছে এই ব্যাগ কোনো কাজেই লাগেনি।