কয়রায় রাতভর বাঁধ নিয়ে ব্যস্ততা, তবু শেষ রক্ষা হলো না

খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরের দশালিয়া গ্রামের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। আজ সকাল নয়টার দিকেছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ারে লোকালয়ে যেন লোনাপানি ঢুকতে না পারে, সে জন্য রাতভর বাঁধের ওপর কাদামাটিভর্তি বস্তা দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু আজ ভোরের আলো ফোটার আগে জোয়ারের পানির উচ্চতার কাছে তা আর টিকতে পারেনি। খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে কয়রা নদীর বাঁধ জোয়ারের চাপে ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।

গতকাল রোববার ভোর থেকে কয়রায় থেমে থেমে দমকা হাওয়া আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। সন্ধ্যার পর বদলাতে থাকে প্রকৃতি। রাত আটটার দিকে প্রবল দমকা হওয়ার সঙ্গে শুরু হয় টানা বৃষ্টি। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উঁচুতে ওঠে।
দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করা কয়রার লোকজন বলছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান আর ইয়াসের পর এমন পানির চাপ আর দেখেননি তাঁরা। বিশেষ করে পূর্ব দিকের প্রবল বাতাস জোয়ারের পানি ও ঢেউয়ের উচ্চতা বাড়িয়ে দিয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়রা সদরের ৪ নম্বর কয়রা, গড়িয়াবাড়ি, ঘাটাখালী, হামখুড়ার গড়া, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট; মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া, সুতিয়া বাজার, পবনা; মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালীবাড়ি, শিঙেরচর, নয়ানী; উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের পাথরখালী; দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা, গোলখালী, জোড়শিং ও চরামুখা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করলেও সাধারণ মানুষের চেষ্টায় বাঁধ রক্ষা সম্ভব হয়। তবে রাতভর চেষ্টা করেও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের শিঙেরচর বাঁধের পানি আটকাতে পারেননি এলাকাবাসী।

কয়রা উপজেলা প্রশাসন বলছে, বাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশের কারণে এবং ঝোড়ো বাতাসে কয়রায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৯৫ হাজার। ঝড়ে বিধ্বস্ত বাড়ির সংখ্যা তিন হাজার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মাছের ঘেরের। অন্তত ৫০০ একর মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক স্থানে পানি উপচালেও বাঁধ ভাঙেনি। কিন্তু জোয়ারের পানির উচ্চতা ও চাপ এতটাই বেশি ছিল যে দশালিয়া ও মহেশ্বরীপুর এলাকার বাঁধ পানির চাপ ধরে রাখতে পারেনি।

আজ সোমবার ভোরে কয়রার মদিনাবাদ এলাকার কপোতাক্ষ নদ এবং উত্তর বেদকাশী এলাকার শাকবাড়িয়া নদীর ধারে গিয়ে দেখা যায়, উত্তাল নদী, কিনার ছুঁই ছুঁই পানি। কোথাও কোথাও বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে বাঁধের ওপর। তাতে মাটির বাঁধ ভাঙার উপক্রম। সকাল নয়টার দিকে দশালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কপোতাক্ষ নদের ভাঙা বাঁধ দিয়ে হু হু করে পানি নামছে নদে।

মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী বলেন, নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধ উপচে ও ভেঙে ৫টি স্থান দিয়ে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে মাছের ঘের। ছয় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছে।

আরও পড়ুন

কয়রা সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান সরদার লুৎফর রহমান বলেন, ৪ নম্বর কয়রা স্লুইসগেটের পাশে বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করলেও তাৎক্ষণিক এলাকাবাসী কাজ করে পানি প্রবেশ থেকে বিরত রাখেন। বর্তমানে ওই স্থানটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের চেষ্টা চলছে জানিয়ে পাউবো খুলনার উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন বলেন, গতকাল বিকেলে জোয়ারের পানি খুব বেশি না বাড়ায় মনে করা হচ্ছিল, এ যাত্রায় হয়তো রক্ষা পাওয়া যাবে। কিন্তু মধ্যরাত থেকে ঝোড়ো হাওয়া আর নদীতে জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঢেউও খুব বেড়েছিল। রাতে জোয়ারের উচ্চতা বেড়েছে প্রায় দুই ফুট বেশি। বাঁধ মেরামতের জন্য গতকাল রাতভর এলাকার মানুষ যে কষ্ট করেছেন, তা বৃথা হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন