গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে জলাবদ্ধতা, ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা
কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও এর চেয়ে কম। কয়েকটি স্থানে নালার স্লাব খুলে রাখা হয়েছে। ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। কখনো কখনো দীর্ঘ যানজট দেখা দিচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত এ চিত্র দেখা যায়।
ভোগড়া এলাকায় কথা হয় গাজীপুর মহানগরের ট্রাফিক পুলিশের সদস্য আল আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মহাসড়কে পানি জমে থাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঢাকা-বাইপাস সড়কে টোল আদায় করায় ধীরগতির কারণে যানজট দীর্ঘ হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা এই যানজট নিরসন করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র চার দিন। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে রাজধানী ও আশপাশের জেলা থেকে গ্রামের বাড়ি ফিরবেন কর্মজীবী মানুষেরা। রোববার সকাল থেকে গাজীপুরের দুই মহাসড়ক দিয়ে যাত্রীর চাপ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। তবে চলমান বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হলে এবং শিল্পকারখানা একসঙ্গে ছুটি হলে যানজটের শঙ্কা করছেন যাত্রী ও পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এলাকাবাসী ও ট্রাফিক পুলিশ জানায়, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে গাজীপুরের ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তাসহ আশপাশের সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী ও মহাসড়কের যাত্রীরা। বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির কারণে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। এ জন্য আশঙ্কা করা হচ্ছে, বৃষ্টি না কমলে এবারের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি পোহাতে হবে ঘরমুখী মানুষদের।
শিল্প–অধ্যুষিত গাজীপুরে ২ হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কলকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১৫৪টি পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করেন লাখ লাখ কর্মী। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ কারখানা ছুটি হবে ৪ থেকে ৬ জুনের মধ্যে। একসঙ্গে ছুটি হওয়ায় মহাসড়কে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হবে এবং যানজটের সৃষ্টি হতে পারে।
উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ–খ্যাত ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় ও ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তা ধরেই মূলত রাজধানী ও গাজীপুরের লোকজন বাড়ি ফেরেন। ঈদের আগের চাপ এড়িয়ে চলার জন্য অনেকেই পরিবার-পরিজনকে আগেই গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
এলাকাবাসী জানান, গাজীপুর শহর ও এর আশপাশ এলাকায় কয়েক দিন ধরে কখনো ভারী, কখনো মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি হচ্ছে। অতিবৃষ্টির কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে বেশ কয়েকটি যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে। এতে ওই মহাসড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং টাঙ্গাইল সড়ক মিলিত হয়েছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এ পথ দিয়ে চলাচল করেন। বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকেই দুর্ভোগ বাড়তে থাকে। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জলাবদ্ধতার সমস্যা। ফলে হাঁটাচলা যেমন কঠিন হয়ে পড়েছে, তেমনি যানবাহন গর্তে আটকে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে। জলাবদ্ধতার প্রভাবে আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেচাকেনাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাসন সড়ক এলাকার উড়ালসড়ক যেখান থেকে শুরু হয়েছে সেখানেই জমে আছে পানি। মহাসড়কে পানি জমে থাকায় গর্তে পড়ার ভয়ে এক লেন করে যানবাহনগুলো চলাচল করছে। একই অবস্থা ভোগড়া এলাকায়। সেখান থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা পর্যন্ত দেখা যায় যানবাহনগুলো ধীরগতিতে চলছে। সড়কের পাশের স্লাবগুলো উঠিয়ে রাখায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় লোকজন গর্তের মধ্যে খুঁটি দিয়ে সেখানে লাল কাপড় বেঁধে রেখেছেন।
চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কথা হয় ভিআইপি পরিবহনের চালক আসলাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে মহাসড়কে পানি জমে আছে। এই অবস্থা যদি ঈদের আগেও থাকে তাহলে মানুষের এবার দুর্ভোগের আর শেষ থাকবে না। অনেক কষ্ট করে বাড়ি যেতে হবে। তাই দ্রুত পানি সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
আলম এশিয়া পরিবহনের সহযোগী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এমন বৃষ্টি থাকলে এবারের ঈদে যানজট সৃষ্টি হবে। বৃষ্টি থাকলে খানাখন্দ হয় এবং গাড়িও অস্তে চালাতে হয়। আশা করছি দু–এক দিনের মধ্যে বৃষ্টি কমে আসবে। তা না হলে সবারই সমস্যা হবে।’
ডেনিম এশিয়ার শ্রমিক মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কারখানা ৫ জুন ডিউটি করে ছুটি। ওই দিন আশপাশের সব কারখানা একসঙ্গে ছুটি দেবে। এ জন্য পরিবারের সদস্যদের আজ গ্রামের বাড়ি নওগাঁয় পাঠিয়ে দিলাম।’
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আশরাফুল আলম জানান, সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথের লোকজন মহাসড়কের জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে। দুটি বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। একটি হচ্ছে ঘরমুখী মানুষের নির্বিঘ্ন যাত্রা, অন্যটি হচ্ছে পশুবাহী গাড়ি রাজধানীতে যাতে সহজে প্রবেশ করতে পারে। বৃষ্টি হলে কিছুটা ভোগান্তি হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
সালনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শওকাতুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এখন পর্যন্ত যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এই মহাসড়কের গাজীপুর অংশে তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে ঈদের আগে একসঙ্গে সব কারখানা ছুটি হলে দুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।