চোর সন্দেহে কিশোরকে নির্যাতন, আ.লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্ব চোর সন্দেহে এক কিশোরকে (১৬) নির্যাতন ও প্লায়ার্স দিয়ে হাতের দুটি আঙুল থেঁতলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার লোহাগাছ ফালু মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
চোর সন্দেহে নির্যাতনের ঘটনায় জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে পুলিশ রাতেই অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতাসহ তিনজনকে আটক করে। আজ মঙ্গলবার ৫৪ ধারায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম মো. মোজাম্মেল হক। তিনি উপজেলার লোহাগাছ গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহাবুদ্দিনের ছেলে এবং শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক। পাশাপাশি ফালু মার্কেট এলাকায় একটি ঋণদানকারী মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠান চালান তিনি। গ্রেপ্তার অন্য দুজনের নাম রাকিব হোসেন (৩০) ও মো. শরিফুল ইসলাম (৩৫)।
ভুক্তভোগী কিশোরকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন স্বজনেরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই কিশোরের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নির্যাতনের শিকার কিশোরের মা বলেন, গতকাল তাঁর ছেলে ফালু মার্কেট এলাকার একটি মসজিদে তারাবির নামাজ পড়তে যায়। তখন আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল কয়েকজনকে নিয়ে ওই মসজিদে যান এবং মসজিদের ভেতর থেকে সাগরকে বের করে আনেন। পরে তাকে জোর করে ফালু মার্কেট এলাকায় মোজাম্মেলের মাল্টিপারপাস কার্যালয়ের সামনে নিয়ে যান। সেখানে আনার পর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় চুরির চেষ্টা চালানোর অভিযোগ তুলে তাঁর ছেলেকে নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে প্লায়ার্স দিয়ে তার দুটি আঙুল নখসহ থেঁতলে দেন। খবর পেয়ে তিনিসহ স্বজনেরা ঘটনাস্থলে গেলে মোজাম্মেলসহ অন্যরা তাঁদের মারতে উদ্যত হন। অনেক অনুনয় ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় পরে ছেলেকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ফালু মার্কেট এলাকার বাসিন্দা মো. রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই কিশোর যে চুরি করেছে, তার কোনো প্রমাণ নাই। মোজাম্মেল নাকি সিসিটিভিতে দেখেছেন, ওই কিশোর তাঁর বাসার আশপাশে রাতে ঘোরাঘুরি করে।’ তিনি বলেন, মারধরের একপর্যায়ে প্লায়ার্স দিয়ে ওই কিশোরের দুটি আঙুল থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। ফালু মার্কেট ও লোহাগাছ এলাকায় চুরির চেষ্টার অভিযোগে তাকে নির্যাতন করা হয়।
তবে আহসান উল্লাহ নামে ফালু মার্কেট এলাকায় এক দোকানি বলেন, কয়েক দিন আগে বটতলা এলাকার একটি দোকানে তালা কাটার চেষ্টা করেছিল ওই কিশোর। সম্প্রতি ফালু মার্কেট এলাকার একটি দোকানেও সে চুরির চেষ্টা করেছিল বলেও অভিযোগ আছে।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ফালু মার্কেট এলাকার বেশ কয়েকজন দোকানি জানিয়েছেন, ওই ছেলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি চুরির অভিযোগ আছে। এরপরও মোজাম্মেলের আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি। দেশে আইন আছে, পুলিশ আছে। অভিযোগ থাকলে আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি দেওয়া যেত।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে যান। সেখান থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।