গণশৌচাগার, বিশ্রামাগার বন্ধ করে দোকান ভাড়া

বিশ্রামাগারের জায়গায় চলছে চা ও কনফেকশনারির দোকান। আর গণশৌচাগারের জায়গায় করা হয়েছে সেলুন। ভুগতে হচ্ছে পথচারীদের।

যাত্রীছাউনি ও গণশৌচাগার দখল করে বানানো হয়েছে সেলুন, মুদিদোকান। গত শনিবার দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মির্জাপুর উপজেলার ক্যাডেট কলেজ এলাকার বাণিজ্য মার্কেট এলাকায়ছবি : প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গণশৌচাগার ও যাত্রীদের বিশ্রামাগার বন্ধ করে সেলুন, চা ও কনফেকশনারির দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পাশেই থাকা যাত্রীছাউনির সামনে ভ্রাম্যমাণ দোকানের ব্যবসা চলছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের ক্যাডেট কলেজ এলাকার বাণিজ্য মার্কেটে (রনারচালা) দক্ষিণ এশিয়া উপ–আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রকল্প (সাসেক) থেকে যাত্রী ও পথচারীদের জন্য ওই গণশৌচাগার, বিশ্রামাগার ও যাত্রীছাউনি নির্মিত হয়। এসব স্থাপনা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের অধীনে। প্রায় দুই বছর আগে এগুলো সড়ক বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

গণশৌচাগার ও বিশ্রামাগার বন্ধ করে দেওয়ায় পথচারী ও যাত্রীদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, গণশৌচাগারটি পথচারী ও আশপাশের লোকজনের জন্য খুব উপকারে আসছিল। এখন সেখানে দোকান হওয়ায় কেউ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের বেশি ভোগান্তি হয়।

গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ওই এলাকায় মহাসড়ক–সংলগ্ন একতলা ভবনের দুটি অংশ রয়েছে। এর এক পাশে গণশৌচাগারের জায়গা, অপর পাশে বিশ্রামাগার। প্রায় দুই বছর আগে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। বিশ্রামাগারে বিসমিল্লাহ টেলিকম নামের একটি সাইনবোর্ড দিয়ে সেখানে প্রায় দেড় বছর ধরে চা ও কনফেকশনারি দোকান চলছে। দোকানি সালাম মিয়া জানান, তাঁর ছেলে হামিদুল ইসলাম দোকানটি পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছেন।

গণশৌচাগার ও বিশ্রামাগারের পাশে একটি মার্কেটের মালিক ছানোয়ার ভূঁইয়া। তিনি ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এলাকায় তাঁর ব্যবসাগুলো দেখেন ফেরদৌস মিয়া নামের এক ব্যক্তি।

গণশৌচাগারের অংশে কোনো সাইনবোর্ড নেই। সেখানে একটি সেলুনের কাজ চলছে। সেলুনে তিনটি চেয়ার বসানো হয়েছে। চেয়ারগুলোর সামনে কাচ ও হার্ডবোর্ড দিয়ে সাজানো হয়েছে। কাচের পেছনে থাকা বাথরুমের দরজার চিহ্ন বোঝা যাচ্ছে। দেয়ালের ওপরের ফাঁকা অংশ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই সেখানে বাথরুমের দরজা ছিল।

কর্মরত নরসুন্দর সোহাগ চন্দ্র জানান, পার্শ্ববর্তী বোর্ডঘর এলাকার শুভ সরকার দোকানটি ভাড়া নিয়েছেন, যা আয় হয় তার অর্ধেক শুভকে দিতে হয়। শুভ স্থানীয় ছানোয়ার হোসেনের কাছ থেকে দোকানটি ভাড়া নিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছানোয়ার কাকারে ভাড়া দেয়। ফেরদৌস (ছানোয়ারের ম্যানেজার) ভাড়া তোলে।’

মুঠোফোনে কথা হলে শুভ সরকার জানান, দুই মাস ধরে তিনি দোকান চালাচ্ছেন। মাসে চার হাজার টাকা ভাড়া দেন। ফেরদৌস ভাড়া তোলেন। এর সঙ্গে ছানোয়ার ভূঁইয়া রয়েছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছানোয়ার ভূঁইয়া মির্জাপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য। বাণিজ্য মার্কেটে তাঁদের নিজস্ব জায়গায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর আশপাশের দোকানের ব্যবসা তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন।

তবে গণশৌচাগার ও বিশ্রামাগার বন্ধ করে ব্যবসা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে ছানোয়ার বলেন, ‘এসব বিষয় আমি দেখি না। আমার ম্যানেজার হয়তো টাকা তোলে। রোডের ঠিকাদার ওই বিল্ডিং ভাড়া দিছে।’

ফেরদৌস জানান, তিনি যে টাকা ভাড়া তোলেন, সেখান থেকে ছয় হাজার টাকা হাবিবুর ইসলাম নামে সড়ক বিভাগের একজন কর্মীকে বিকাশের মাধ্যমে পাঠান। তবে হাবিবুরের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি তাঁর নম্বর দিতে পারেননি। ইমো অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁর (ফেরদৌস) মুঠোফোন দিয়ে কল করলেও হাবিবুর ফোন ধরেননি।

স্থানীয় কয়েকজন দোকানি জানান, যাত্রীছাউনি ও এর আশপাশে ফুটপাতে দোকান বসালেও ফেরদৌসকে প্রতিটি দোকানে দৈনিক ১০০ টাকা দিতে হয়। 

গণশৌচাগারটি থেকে অনেক দূরে মসজিদের বাথরুমে তাঁরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেন। তবে সবাই সেখানে যেতে পারেন না। একই কথা বলেন গোড়াই ইউপি সদস্য আদিলুর রহমান খান।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমেরী খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। মির্জাপুর সড়ক ও জনপথ উপবিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।