স্ত্রীর স্বপ্ন পূরণে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে চান তিনি

আনসার আলীর ছবিসংবলিত পোস্টার কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ নানা ধরনের মন্তব্যও করছেন
ছবি: প্রথম আলো

কয়েক মাস আগে স্ত্রী মারা গেছেন তাঁর। জীবিত থাকতে স্ত্রী চেয়েছিলেন, তাঁর স্বামী সংসদ সদস্য হয়ে এলাকার মানুষের সেবা করবেন। এবার স্ত্রীর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে এলাকায় পোস্টার সাঁটিয়েছেন তিনি। পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী, গরিব ও দুঃখীর সঙ্গের সাথি। স্ত্রী বলার কারণে আমি এ পথে এসেছি।’

মো. আনসার আলী সরদার নামে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বাতিখালি এলাকার এক বাসিন্দা বিভিন্ন হাটবাজারে এমনই পোস্টার সাঁটিয়েছেন। তিনি আগামী নির্বাচনে খুলনা-৬ (পাইকগাছা ও কয়রা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে জানান। তাঁর ছবিসংবলিত পোস্টার কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ নানা ধরনের মন্তব্যও করছেন।

আনসার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী বলত, এলাকার বেশির ভাগ মানুষ গরিব। তারা অভাব-অনটনে থাকে। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। কোনো এমপি (সংসদ সদস্য) আজ পর্যন্ত এলাকার গরিব মানুষির জন্যি কিছু করেনি। সে (স্ত্রী) আজ নেই। তার কথাগুলো আমি অন্তরে ধারণ করে আছি। দেখি, তার স্বপ্ন পূরণে কিছু করতি পারি কি না। জনগণ চাইলে আমি এমপি হয়ে এ কাজগুলো করব।’

আনসার আলীর দুই মেয়ে ও এক ছেলে আছে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেটি ছোট। বাবার সঙ্গেই থাকেন। তিনি একটি মাছের ডিপোর ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। এ ছাড়া তাঁর কিছু জমিজমাও আছে। এতেই তাঁর সংসার ভালোভাবে চলে বলে জানান প্রতিবেশীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহজামান বাদশা বলেন, স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন বলে মনে হয়। কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে, তিনি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে পোস্টার সাঁটাচ্ছেন। তাঁর ছেলেমেয়েরা তাঁকে নিষেধ করেও থামাতে পারছেন না। বলছেন, তাঁর স্ত্রীকে দেওয়া কথা রাখতে তিনি এ পথে নেমেছেন।

আশরাফুল আলম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘উনি একজন সহজ-সরল মানুষ। স্ত্রীর মৃত্যুশোকে কিছুটা পাগলামি করছেন। তবে এলাকার মানুষের মনের কথা সঠিকভাবেই তুলে ধরেছেন তিনি।’ আবুল কালাম আজাদ নামের একজন কলেজশিক্ষক বলেন, ‘রাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের এই সময়ে ওনার মতো একজন ব্যক্তির প্রার্থী হওয়াটাও একটা প্রতিবাদ বলে আমি মনে করি।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ আসনে এই মুহূর্তে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রচার-প্রচারণা না থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক ডজন প্রার্থী প্রচারণায় আছেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনসার আলীর আবির্ভাব এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আলোচনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

জানতে চাইলে নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে আনসার আলী বলেন, ‘আমি পাগল না, প্রার্থী হয়েছি গরিব-মেহনতি মানুষের জন্যি কাজ করতি। এই এলাকার মানুষ চিরকাল অবহেলিত। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম দেশটায় যাতে সবার অধিকার সমান হয়। কিন্তু এত বছর পরও তা সম্ভব হয়নি। আমি এমপি (সংসদ সদস্য) হতি পারলি এলাকায় কর্মসংস্থানের জন্যি কাজ করব।’