নোয়াখালীতে ‘আশ্রয়ণের ঘর’ দেওয়ার কথা বলে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার কথা বলে ধর্ষণ ও মারধর করা হয়েছে বলে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন এক নারী (৪২)। ২ নভেম্বর তিনি লিখিত অভিযোগ দিলেও এ ঘটনায় এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সেনবাগ থানার পুলিশ। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার জন্য ওই নারীকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর নাম গোলাপ হোসেন (৩৮)। তিনি সেনবাগের একটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য।
পুলিশ সুপারের কাছে করা ওই নারীর অভিযোগ থেকে জানা গেছে, তাঁর স্বামী-সন্তান কেউ নেই। উপজেলার একটি এলাকার একটি বাসায় থাকেন তিনি। আশপাশের শিশুদের পড়িয়ে যে টাকা পান, তা দিয়ে চলেন।
ওই নারীর অভিযোগ, তিনি কিছুদিন আগে গোলাপ হোসেনের কাছে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার কোনো সুযোগ আছে কি না, জানতে যান। তখন গোলাপ হোসেন পরিষদের কাছে ১২টি ঘর আছে জানিয়ে তাঁর কাছ থেকে মুঠোফোনের নম্বর নেন। এর মধ্যে একদিন গোলাপ হোসেন ওই নারীকে তাঁর বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের ঘটনাটি ওই নারী গোলাপের পরিবারকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বললে তাঁকে মারধর করা হয়। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি বিচার করতে পারবেন না বলে জানান। পরে তিনি বাধ্য হয়ে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অভিযোগ দেওয়ার পর সেদিনই তিনি সেনবাগ থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে দেখা করে একই অভিযোগ দেন। ওসি একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) দায়িত্ব দেন ঘটনাটি তদন্ত করতে। কিন্তু এসআই ঘটনাস্থলে গেলেও অভিযুক্ত গোলাপের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। অন্যদিকে বিষয়টি মীমাংসার কথা বলে গোলাপ হোসেন লিখিত অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে তাঁকে চাপ দিচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য গোলাপ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ভিত্তিহীন। একই ভবনে বসবাসকারী এক নারীর সঙ্গে তাঁকে জড়িয়ে আজেবাজে কথা বলায় তিনি ওই নারীকে চড়-থাপ্পড় দিয়েছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারী তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করেন। পরে তিনি বিষয়টি জানতে পেরে ওই নারীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং লিখিত অভিযোগটি তুলে নিতে বলেছেন।
সেনবাগ থানার ওসি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে দাপ্তরিকভাবে তাঁর কাছে কোনো কাগজ আসেনি। তবে ওই নারী থানায় তাঁর সঙ্গে দেখা করে অভিযোগটি জানিয়েছেন। তিনি একজন এসআইকে বিষয়টি তদন্ত করার দায়িত্ব দিয়েছেন। তদন্তে চড়-থাপ্পড়ের সত্যতা পাওয়া গেলেও ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ আছে। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অভিযোগ করার ৯ দিন পরও নির্যাতনের শিকার নারী আইনি সহায়তা পাননি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।