ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে চাল আমদানি করতে হবে না: খাদ্য উপদেষ্টা

ময়মনসিংহে প্রশাসন, খাদ্য ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। আজ দুপুরে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সভাকক্ষে
ছবি: প্রথম আলো

খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বর্তমানে দেশের খাদ্য পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক। খাদ্যের মজুত আছে ১৫ লাখ টনের মতো, যেটা গত বছরের এই দিনের চেয়ে ৩ টন বেশি। এবার বোরো ধান ভালো হয়েছে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে, আমনও যদি ভালো হয়, তাহলে আশা করা যায়, চাল আমদানি করতে হবে না।

উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বিভাগীয় প্রশাসন; ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক; খাদ্য বিভাগের আঞ্চলিক কর্মকর্তা, কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন। চলতি মৌসুমের বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, মজুত ও বিতরণ বিষয়ে আয়োজিত এ বৈঠক শুরু হয় দুপুর ১২টায়, শেষ হয় বেলা সোয়া ১টায়।

বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সভাকক্ষে রুদ্ধদ্বার এ বৈঠক শেষে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের আসার উদ্দেশ্য ছিল ময়মনসিংহ বিভাগের বর্তমান বোরো মৌসুমের সংগ্রহ কার্যক্রম পর্যালোচনা করা এবং কোথাও সমস্যা থাকলে সেটি দূর করা। পাশাপাশি সরকারের চলমান খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিগুলো কীভাবে চলছে, সেগুলো নিয়ে আগামী দিনের করণীয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহের চার জেলায় অভ্যন্তরণীর বোরো মৌসুমে ৪৭ হাজার ৯৩৬ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা কথা থাকলেও সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৮৪৬ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বিভাগের ময়মনসিংহ জেলায় ৩৬৯ টন, নেত্রকোনায় ১ হাজার ২৪৬ টন, জামালপুরে ১৩৫ টন ও শেরপুরে মাত্র ৯৬ টন ধান কেনা হয়েছে। একই মৌসুমে ২ লাখ ২৫ হাজার ৮২৭ টন সেদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৪৬০টি মিলের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। কিন্তু চাল সংগ্রহ করা গেছে ৭৩ হাজার ২০০ টন চাল, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩২ দশমিক ৪১ শতাংশ।

উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের বোরো সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনার কিছু অঞ্চল ছাড়া বাকিটা হাওর অঞ্চল নয়। হাওর অঞ্চলের ধান আগে কাটা হওয়ায় নেত্রকোনায় ধান সংগ্রহ যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে। বাকি জেলাগুলো কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এই পিছিয়ে থাকার পেছনে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সেগুলো আজ কেটে গেছে। আমরা আশাবাদী, এখানে যে টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে, আগামী দিনে তার ওপরে সংগ্রহ করা যাবে।’

দেশে দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা আরও বাড়ানো হবে বলে জানান উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেন, দেশে ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবার বছরে ৫ মাস ৩০ কেজি করে চাল পেত। সেটি সম্প্রসারণ করে আগামী অর্থবছর থেকে বছরে ৬ মাস ৩০ কেজি করে চাল পাবে ৫৫ লাখ পরিবার। সেই তালিকা নতুনভাবে করার জন্য জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে। যাঁরা পাওয়ার যোগ্য নন, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি এবং যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে বলা হয়েছে।

চালের দাম কমবে কি না, এমন প্রশ্নে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, কৃষককে তাঁর পণ্যের দাম দিতে হবে। ১৫ টাকা কেজি দরে বছরে ৬ মাস যাঁরা চাল পাবেন, তাঁরা তো আর বাজারে চাল কিনতে যাবেন না। সুতরাং বাজারের ওপর চাপটা পড়বে না। তিনি বলেন, ‘এসব ম্যাকানিজমের মাধ্যমে মুক্তবাজার অর্থনীতি কন্ট্রোল করা হয়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজারে চালের দাম ধরে দেওয়া যায় না।’

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হানাছাত হুমায়ুন কবীর, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তার প্রমুখ।