যশোরে গণপরিবহনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি, সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। সোমবার দুপুরে
ছবি: সংগৃহীত

যশোর-চৌগাছা সড়কে যাত্রীবাহী একটি বাসে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটকের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে এই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এ সময় ওই সড়কের কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি।

বিক্ষোভ থেকে শ্লীলতাহানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে আটক, গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শাটল বাস চালু করাসহ কয়েকটি দাবি জানানো হয়েছে।

পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার যশোর-চৌগাছা সড়কের চূড়ামনকাঠি এলাকা থেকে বাসে ওঠেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। এ সময় বাসের ভেতরে এক যুবক ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেন। বিষয়টি ওই ছাত্রী তাঁর সহপাঠীদের জানালে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফটকে পৌঁছালে ওই যুবককে নামিয়ে নিয়ে মারধর করে নাম-ঠিকানা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে ক্যাম্পাসে বিষয়টা জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন বিষয়টি পুলিশকে জানান।

যাত্রীবাহী বাসে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। সোমবার দুপুরে
ছবি: সংগৃহীত

এদিকে ওই যুবককে আটকের জন্য শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। এর মধ্যে ওই যুবককে পুলিশ আটক করতে ব্যর্থ হওয়ায় আজ দুপুর থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আসামিকে আটকসহ দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।

বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু দাবি জানান। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, শ্লীলতাহানির ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীর বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি; চৌগাছা বাস মালিক সমিতির নেতাদের জবাবদিহির আওতায় আনা; যশোর-চৌগাছা সড়কে সব গণপরিবহনের চালক ও সহকারীকে যাত্রীনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ (বিশেষ করে নারী ও শিশু) ; গণপরিবহনের সামনের সারিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসন নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ রাখা; ভবিষ্যতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে যশোর-চৌগাছা বাস মালিক সমিতিকে এর পুরো দায়ভার নেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহরের মধ্যে প্রতি ঘণ্টায় শাটল বাস সার্ভিস ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আসামিকে আটকসহ দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন
ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শাটল বাস দেওয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটকের বিষয়ে পুলিশকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া গণপরিবহন-সংক্রান্ত দাবিগুলোর জন্য যশোর চৌগাছা বাস মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বসে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চৌগাছা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাসের ভেতরে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদের জানা নেই। আজ হঠাৎ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে ৫ ঘণ্টা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়, যা আমাদের জন্য দুঃখজনক। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আমাদের জানালে আমরা বিবেচনা করব।’
জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান বলেন, ‘ঘটনা জানার পর গতকালই আমরা ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। অভিযুক্ত যুবকের নাম-পরিচয় জানতে পেরেছি। তাঁকে আটকের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’