চিনিকলের আখ যাচ্ছে গুড়ের কারখানায় 

মিল এলাকায় মাড়াইকলে গুড় উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না অনেক আখচাষি। 

আখমাড়াই শেষে বন্ধ হয়ে গেছে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার জিল বাংলা সুগার মিলের। তবে এখনো মাঠে আখ রয়েছে। ১৭ জানুয়ারি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মাইছানীরচর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

চলতি মৌসুমে ৪১ দিন আখমাড়াই শেষে বন্ধ হয়ে গেছে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার জিল বাংলা সুগার মিল। মাড়াই বন্ধ হলেও চুক্তিবদ্ধ সব চাষি চিনিকলে আখ সরবরাহ করেননি। তাঁরা চিনিকলের বদলে স্থানীয় গুড় তৈরির কারখানায় আখ সরবরাহ করছেন। মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, আখসংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই মিলটি বন্ধ করা হয়েছে। চাষিরা বলছেন, চিনিকলের চেয়ে গুড় তৈরির কারখানায় আখ বিক্রি করলে তাঁদের লাভ হয় বেশি। এ ছাড়া অনেক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় বলে তাঁরা চিনিকলে আখ বিক্রিতে আগ্রহী নন।

জিল বাংলা সুগার মিল সূত্রে জানা গেছে, গত ২ ডিসেম্বর এই মৌসুমের আখমাড়াই শুরু হয়। ৬৮ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে এবার ৪ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, এই মৌসুমে ৬০ দিন আখমাড়াইয়ের কথা ছিল। কিন্তু ৪১ দিন আখমাড়াইয়ের পর ১২ জানুয়ারি তা বন্ধ হয়ে যায়। ৪১ দিনে ৩৫ হাজার ১৭১ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করা হয়েছে ২ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন। আখসংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই মিলটি বন্ধ করতে হয়েছে।

মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মো.আনোয়ার হোসেন জানান, মিল এলাকায় মাড়াইকলে গুড় উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না অনেক আখচাষি। মিলে আখ সরবরাহের জন্য চাষিদের শুরু থেকেই আহ্বান করা হয়েছে। যে পরিমাণ আখ এখনো মাঠে রয়েছে, তা মিলে সরবরাহ করা হলে মিলটিতে আরও ১০ দিন বেশি আখ মাড়াই করা যেত। কিন্তু কৃষকেরা উৎপাদিত আখ মিলে সরবরাহ না করে স্থানীয় গুড় তৈরির কারখানায় বিক্রি করছেন। আখসংকটের কারণেই নির্ধারিত সময়ের আগেই এই মৌসুমের আখমাড়াই বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

তবে চিনিকল বন্ধ হওয়ার পর ১৭ জানুয়ারি দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মাইছানীরচর, চরকালিকাপুর, তারাটিয়া, কলকিহারা; বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর; ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালেরচর ও গঙ্গাপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে এখনো আখ রয়েছে। খেত থেকে আখ কাটছেন কৃষকেরা। নারী-পুরুষ মিলে সবাই আখ কাটতে ব্যস্ত। এসব আখ ভটভটিতে ওঠানো হচ্ছে। পরে এগুলো দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গুড় তৈরির কারখানায় নেওয়া হচ্ছে।

মাইছানীরচর এলাকার ইউনুছ আলী বলেন, সার, বীজ, শ্রমিকসহ উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় আখ চাষে তাঁরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। আবার আখের ফলনও কমে গেছে। চিনিকলে আখ সরবরাহে জটিলতা রয়েছে। নানা কারণে এখন তাঁদের চিনিকলে আখ সরবরাহে কোনো আগ্রহ নেই। সরবরাহ করা আখের টাকা পেতে সময় লাগে ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আর এবার তো চিনিকলও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন গুড় কারখানার মালিকেরা কৃষকের খেত থেকে সরাসরি বেশি দরে আখ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

একই গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, ৯–১০ মণ আখ থেকে ১ মণ গুড় পাওয়া যায়। প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। চিনিকলে আখ দেওয়ার চেয়ে তাঁদের তিন গুণ বেশি লাভ হয় গুড়ের কারখানায় দিলে।

কৃষকেরা বলেন, গুড় উৎপাদনকারীরা কৃষকের কাছ থেকে ৪০ মণ আখ ১১ থেকে ১২ হাজার টাকায় কিনে নিচ্ছেন। ৪০ মণ আখ মিলে
সরবরাহ করে তাঁরা পান ৭ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ৪০ মণ আখে চাষিরা ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি পাচ্ছেন।

জিল বাংলা সুগার মিল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসান বলেন, চিনিকল এলাকায় যন্ত্রে (পাওয়ারক্রাশারে) আখমাড়াই অবৈধ। কিন্তু চাষিরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাড়াই মৌসুমে মিলে সব আখ সরবরাহ করেননি। এতে মিলটির অনেক ক্ষতি হয়েছে। অবৈধভাবে আখের গুড় তৈরির কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হয়েছে। আরও যেসব কারখানা রয়েছে, তাঁদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী মৌসুমে আখের চাষ ও সরবরাহ বাড়াতে কাজ করা হবে।