স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে হারিয়ে ফকির মোহাম্মদের বিলাপ থামছে না
ছবি: প্রথম আলো

‘ও আল্লা মুই হারে চাইয়ারে থাকিম। তাড়ারে রাখিয়া রে মরে লই গিলই খুব বালা অইত।’ (আল্লাহ, আমি কাকে নিয়ে বাঁচব। তাদের রেখে আমাকে নিয়ে গেলে খুব ভালো হতো)।

টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজারের মরিচ্যাঘোনার পানিরছড়া পাহাড়ের পাদদেশে ভাঙাচোরা একটি মাটির দেয়ালের পাশে পলিথিনের ছাউনি থেকে ভেসে আসছে এমন বিলাপ। বিলাপ করছিলেন স্ত্রী ও সন্তানহারা ফকির মোহাম্মদ (৫৫)। মাঝেমধ্যেই অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে ভারী বর্ষণের ফলে মরিচ্যাঘোনার পানিরছড়া পাহাড়ের নিচে বসতঘরের মাটির দেয়াল ধসে তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫০), ছেলে শাহিদুল মোস্তফা (২০), মেয়ে নিলুফা ইয়াসমিন (১৫) ও সাদিয়া বেগম (১১) নিহত হন।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে পানিরছড়ার পাহাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লাশ দেখতে এসেছেন ফকির মোহাম্মদের আত্মীয়স্বজনসহ গ্রামের মানুষেরা। এক পরিবারে চারজনের এমন মৃত্যুতে পুরো গ্রামের পরিবেশ শোকাহত হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসী জানান, ফকির মোহাম্মদ পরিবার নিয়ে অনেক বছর ধরে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছিলেন। এক মাস ধরে পাহাড়ের পাদদেশের জমিতে নতুন করে মাটির ঘর তুলছিলেন তিনি। নির্মাণাধীন ঘরের পাশে পলিথিন দিয়ে একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে তাতে রাত্রি যাপন করা হতো। গত বৃহস্পতিবার রাতে পরিবারের সবাই মিলে খাওয়াদাওয়ার পর ঘুমাতে যান। এর মধ্যে রাতে ভারী বৃষ্টিতে নির্মাণাধীন মাটির দেয়াল ভেঙে সবাই চাপা পড়েন। ফকির মোহাম্মদ কোনোরকমে বের হয়ে আশপাশের লোকজনকে ডেকে আনার পর মাটির নিচ থেকে তাঁর স্ত্রী, সন্তানদের মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। গতকাল শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে মৌলভীবাজার মাঠে তাঁদের জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

ফকির মোহাম্মদ বলেন, ‘এই জমিতে দীর্ঘ ২০-২৫ বছর ধরে বসতি করে আসছিলাম। নোয়া গরত স্বপন দেখি, বেগুনরে হবর দিয়ম (নতুন বাড়ির স্বপ্ন দেখে সবাইকে কবর দিলাম)। এখন আমি আর কার মুখ দেখে বেঁচে থাকব।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনায় পুরো পরিবারের লোকজনকে হারিয়েছেন ফকির মোহাম্মদ। নিহত ব্যক্তিদের দাফনের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা ফকির মোহাম্মদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে।