ভোটের লড়াইয়ে আলোচনায় সিলেট শহর রক্ষা বাঁধ ও সুরমা নদী খনন

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত বক্তৃতা করছেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের জুন মাসে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল সিলেট। এর পর থেকেই সিলেট শহর রক্ষা বাঁধ আর সুরমা নদী খননের দাবি ওঠে জোরেশোরে। আগামী ২১ জুন পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হবে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বর্ষা মৌসুম শুরু হবে কিছুদিন পরই। তাই ভোটের লড়াইয়েও বন্যা মোকাবিলায় শহর রক্ষা বাঁধ আর সুরমা নদী খননের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে সিলেটের নাগরিক মৈত্রীর সভাপতি সমর বিজয় সী শেখর প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর তলদেশ প্লাস্টিকসহ নানা বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে। অথচ তা খননে উদ্যোগ নেই। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় গত বছর বন্যায় নদীর পানি উপচে শহর তলিয়েছে। এর পর থেকেই নদী খননের পাশাপাশি শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি উঠেছে। এ নির্বাচনে প্রাসঙ্গিকভাবেই নগরবাসী মেয়র প্রার্থীদের কাছ থেকে এ দুটি দাবি পূরণে প্রতিশ্রুতি চাইবেন—এটাই স্বাভাবিক।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ২১ জুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে। এ জন্য আগামী ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন।

নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বিএনপি সিটি নির্বাচনে না আসার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই নগরে গুঞ্জন রয়েছে, বিএনপির মনোনয়নে টানা দুবার মেয়র নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন; যদিও এ বিষয়ে আরিফুল এখনো নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি।

এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া শুরু করেছেন। এসব কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে তিনি ভোটারদের কাছে দোয়ার পাশাপাশি নৌকা প্রতীকে ভোটও চাইছেন। একই সঙ্গে নগরে বন্যা মোকাবিলায় শহর রক্ষা বাঁধ এবং সুরমা নদী খননের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় তাঁর পক্ষে সহজেই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলেও তিনি বক্তৃতায় জানাচ্ছেন।

সুরমা নদীর তীরবর্তী নগরের মাছিমপুর, উপশহর, ছড়ারপার, কালীঘাট, কিনব্রিজ, তোপখানা কাজিরবাজার, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, মজুমদারপাড়া ও কানিশাইল এলাকা ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, বর্ষা মৌসুমে যখন সুরমা নদী পানিতে টইটম্বুর থাকে, তখন প্রায়ই ভারী বৃষ্টিপাতে নদীর তীরবর্তী আশপাশের এলাকা তলিয়ে যায়। তবে গত বছর মাত্রাতিরিক্ত পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে নদীর পানি উপচে পুরো শহরই তলিয়ে যায়। তাই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির বছর না ঘুরতেই সিটি নির্বাচন হাজির হওয়ায় নগরবাসী শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও নদী খননের দাবি তুলছেন।

যোগাযোগ করা হলে মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট নগরের মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছেন। তিনি নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব সমস্যার সমাধান করবেন। বন্যার পানি যেন শহরে ঢুকতে না পারে, এর সমাধানে স্থায়ী ব্যবস্থা নেবেন। সুরমা নদীর নাব্যতা ফেরাতে বড় ধরনের একটি প্রকল্প নেবেন। এ ছাড়া শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচিত হওয়ার পর শুরুতেই এই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবেন।

সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে বন্যাকবলিত এলাকা দেখতে এসেছিলেন। তখন বন্যা মোকাবিলায় তাঁর কাছে সুরমা নদী খনন এবং শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি উত্থাপন করেছিলেন। প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদদের পরামর্শে এ নিয়ে তৈরি করা একটি লিখিত প্রস্তাবও প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন। তিনি বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় দেখবেন বলে কথাও দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এর কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চয়ই নগরবাসী দেখতে পাবেন।