পেকুয়ায় ডাকাত দলের সঙ্গে পুলিশের ‘গোলাগুলি’, আটক ২

গ্রেপ্তার মো. শোয়াইব। বুধবার সকালে পেকুয়া থানায়
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় ডাকাতি করে পালানোর সময় ডাকাতদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটা থেকে আজ বুধবার ভোর পাঁচটার মধ্যে উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ সময় চারটি গরু ও একটি দেশি অস্ত্র জব্দ করে পুলিশ। একই সঙ্গে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় পেকুয়া সদর ইউনিয়নের আবদুল হামিদ সিকদারপাড়া এলাকা থেকে দুই ডাকাতকে আটক করা হয়। আটক ডাকেতেরা হলেন চকরিয়া পৌরসভার আমানপাড়া এলাকার মো. শোয়াইব (৩৯) ও করাইয়াঘোনা এলাকার মো. জাহেদ (২৫)।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়িয়াখালী এলাকার মঞ্জুর আলমের গোয়ালঘরের দরজা ভেঙে চারটি গরু ডাকাতির পর পিকআপে বারবাকিয়া বাজার-ধনিয়াকাটা সড়ক দিয়ে ধনিয়াকাটা স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল ডাকাত দল। এ সময় পেকুয়া থানার পুলিশের একটি টহল দল ওই সড়ক দিয়ে বারবাকিয়া বাজারের দিকে যাচ্ছিল। ডাকাতের গাড়ি ও পুলিশের সিএনজিচালিত অটোরিকশা মুখোমুখি হলে ডাকাত দল পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও একটি অস্ত্র, গরুসহ একটি পিকআপ ফেলে পালিয়ে যায় ডাকাত দল।

খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ এসে বিভিন্ন সড়কের মুখে অবস্থান নেয়। পরে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের আবদুল হামিদ সিকদারপাড়া এলাকা থেকে দুজনকে আটক করে স্থানীয় জনতা। স্থানীয় জনতা তাঁদের গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরহাদ আলী বলেন, চারটি গরুসহ একটি গাড়ি জব্দ এবং দুই ব্যক্তি পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ডাকাতেরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লেও তাঁরা কোনো গুলি ছাড়েননি বলে দাবি করেন ওসি।

গরুর মালিক মনজুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাকাত দল আমার বসতঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে গোয়ালঘরের দরজা ভেঙে চারটি গরু ডাকাতি করে নিয়ে যায়। গরুগুলোর আনুমানিক দাম ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ডাকাতের গাড়ি পুলিশের গাড়ির মুখোমুখি না হলে গরুগুলো ফিরে পেতাম না। এ ঘটনায় আমি মামলা করব।’

চারটি গরু ও একটি দেশি অস্ত্র জব্দ করেছে পুলিশ। বুধবার সকালে পেকুয়া থানা চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের সুতাবেপারীপাড়ার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম ও তাঁর চাচাতো ভাই জাকের হোসেনের চারটি গরু ২ সেপ্টেম্বর রাতে গোয়ালঘরের গ্রিল কেটে নিয়ে যায় ডাকাত দল। ডাকাত আটকের খবর পেয়ে শহীদুল ইসলাম আজ বুধবার সকাল ১০টায় থানায় আসেন। শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার গরু উদ্ধার না হোক, অন্তত ডাকাত ধরা পড়েছে, এটি খুশির খবর। ডাকাতদের দেখতে ও গরুর সন্ধানে থানায় এসেছি। ডাকাতেরা আমাদের চারটি গরু লুট করে আমাকে নিঃস্ব করে ফেলেছে।’

শুধু শহীদুল ইসলাম নন, গরুর সন্ধান পেতে থানায় এসেছেন সুতাবেপারীপাড়ার নাজেম উদ্দিন (৫৫), বারবাকিয়া ইউনিয়নের সবজীবনপাড়ার জামাল হোসেন সিকদার ও ফিরোজ আহমদ, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের নন্দীরপাড়া এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবু ছালেক, টৈটং ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা এলাকার জাকের আহমদ এবং টৈটং ইউনিয়নের কইড়াপাড়া এলাকার নুরুল কবির সওদাগর। ইউপি সদস্য আবু ছালেক বলেন, এক সপ্তাহ আগে তাঁর দুটি গরু ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। গরু দুটির মূল্য আনুমানিক ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

১৫ সেপ্টেম্বর পেকুয়া সদর ইউনিয়নের সাবেকগুলদি স্টেশনে পাহারাদারকে বেঁধে ছয়টি দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় টাকা, মালামাল, ইজিবাইকের ব্যাটারিসহ অন্তত ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। দুই ডাকাত আটকের খবর পেয়ে আজ সকালে থানায় আসেন সাবেকগুলদি স্টেশনের পাহারাদার আবুল বশর (৫৪)। তিনি দোকান ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক দুই ডাকাতকে শনাক্ত করেন। পাহারাদার আবুল বশর বলেন, ‘এই ডাকাতেরা আমাকে বেঁধে দোকান ডাকাতি করেছে।’

পুলিশ জানিয়েছে, সাবেকগুলদি স্টেশনে ডাকাতির ঘটনায় করা মামলায় আটক দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।