‘নদী নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সমঝোতার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে’

ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ-ভারতে প্রবাহিত নদীগুলোর চুক্তির বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, ‘ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোনো মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হবে না এ বিষয়ে। আলোচনা হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে ‘গঙ্গা চুক্তির অবসানে বাংলাদেশের করণীয়’ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন রাজশাহী শাখা ও হেরিটেজ রাজশাহী এ সেমিনারের আয়োজন করে।

আয়োজক সংগঠনের রাজশাহী জেলা সভাপতি অধ্যাপক ইফতিখারুল আলমের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবদুর রহমান সিদ্দিকী। বিশেষ অতিথি ছিলেন আয়োজক সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মো. আনোয়ার সাদত। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নদী-গবেষক ও হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী। সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন, নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল কাদেরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘বলা হচ্ছে, তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না এটা মমতার দোষ। কী অদ্ভুত কথা! মোদি সরকার যে কথা বলাতে চায়, সেটা অবলীলায় বলে দেয়। আচ্ছা, মমতা যদি সমস্যা হয়, তাহলে ১৯৭৭ সালে তো ভারতের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে, তখনই তো পশ্চিমবঙ্গ পানি দিতে চায়নি। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী আন্তর্জাতিক চুক্তি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে চুক্তি করবে, এখানে রাজ্য সরকারের কিছুই করার নেই। বলতে পারে, বাস্তবায়নে সমস্যা হবে। বাস্তবায়নে সমস্যা হলে সেটিও তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে মারাত্মক নেতৃত্ব-সংকট চলছে। মাওলানা ভাসানী আমাদের ফারাক্কা চুক্তিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাওলানা ভাসানী অনেক ভূমিকা রেখেছিলেন। ফারাক্কা লংমার্চ করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে শুধু এ কারণে চুক্তি হয়নি, হয়েছিল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কারণে। কারণ, প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিষয়টা উত্থাপন করে ভারতের সমালোচনা করেছিলেন তিনি। তিনি সারা পৃথিবীর বিখ্যাত একজন গবেষকের শরণাপন্ন হয়ে গবেষণা করিয়ে নিয়েছিলেন। পরে সেটা জাতিসংঘে উত্থাপন করেছিলেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৭ সালে একটা অসাধারণ চুক্তি হয়েছিল।’