মাদারীপুরে শাজাহান খানের ছেলের বিরুদ্ধে কালোটাকা ছড়ানোর অভিযোগ
মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খানের বিরুদ্ধে ভোটার স্লিপ দেওয়ার সময় টাকা ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাভেলুর রহমান খান। এ ব্যবস্থা নিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা আহমেদ আলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী আসিবুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরাজয় জেনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনগড়া কথা বলে যাচ্ছেন। তাঁর অভিযোগের বাস্তবিক অর্থে কোনো প্রমাণ নেই।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালোটাকা ছড়ানোর বিষয়টি প্রার্থীর অভিযোগে জেনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আজ সকালে আসিবুর রহমান খানের অনুসারী শহরের বাগেরপাড় এলাকার আবু তালেব তালুকদারের নেতৃত্বে কালোটাকা ছড়ানো হয়েছে। এ সময় প্রতি ভোটার স্লিপের সঙ্গে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত ভোটারদের দেওয়া হয়। এ ছাড়া পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ড, পাঠককান্দি, চরমুগরিয়া, কুলপদ্বী, কেন্দুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় কালোটাকা দিয়ে ভোট কেনার মহোৎসব চলছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
মোটরসাইকেল প্রতীকের পাভেলুর রহমান খান অভিযোগ করেন, শাজাহান খান ছেলেকে জেতানোর জন্য কালোটাকার ব্যবহার করছেন। যে এলাকায় আসিবুরের ভোট নেই, সেখানকার ভোটারদের ভোটার স্লিপ দেওয়ার সঙ্গে নগদ টাকা দিচ্ছেন। কালোটাকা ছড়িয়ে শাজাহান খান ভোটের পরিবেশ নষ্ট করছেন। তাঁরা নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে এবং ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ভোটার স্লিপের সঙ্গে টাকা বিতরণ বন্ধের দাবি জানান।
এদিকে নির্বাচনে শাজাহান খানের প্রভাব থাকায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও সংঘাতমুক্ত হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু ও সংঘাতপূর্ণ নির্বাচন চাই। কিন্তু শাজাহান খান তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। ছেলেকে জেতাতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। শাজাহান খানের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি নির্বাচনে হাঙ্গামা না করে থামবেন না।’
অভিযোগের বিষয়ে শাজাহান খানকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। তবে তাঁর ছেলে আসিবুর রহমান খান বলেন, তাঁর বাবা নির্বাচনের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করছেন না। সর্বস্তরের জনগণ ও দলীয় নেতা–কর্মীরাই তাঁর নির্বাচনে সহযোগিতা করছেন।
সদর উপজেলায় ১১৭টি ও রাজৈর উপজেলায় ৬৯টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি কেন্দ্রে ৪ জন পুলিশ, ২০ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া সদরে ২৯টি ও রাজৈরে ১৪টি ভ্রাম্যমাণ দল দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সদরে সাতটি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও রাজৈরে থাকবে তিনটি। সদরে ৬ প্লাটুন ও রাজৈরে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রথম ধাপে আগামীকাল বুধবার মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে শাজাহান খানের বড় ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আসিবুর রহমান খান (আনারস) ও চাচাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান খান (মোটরসাইকেল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী আছেন। ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সদর উপজেলায় মোট ভোটার ৩ লাখ ২২ হাজার ৪২৬। মোট ১১৭টি ভোটকেন্দ্রের ৭৯৪টি কক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা।