সোনালি আঁশের আবাদ বাড়ছে

হবিগঞ্জের আবহাওয়া ও মাটি পাট চাষের জন্য উপযোগী। গত এক বছরে জেলার মাধবপুর, লাখাই ও বানিয়াচং উপজেলায় পাটের উৎপাদন বেড়েছে।

হবিগঞ্জে ‘সোনালি আঁশ’ পাটের আবাদ প্রতিবছর বাড়ছে। জেলার তিনটি উপজেলায় অনেকে পাট চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। বাজারে কৃষকেরা পাটের ভালো দামও পাচ্ছেন। কৃষকেরা বলেন, তাঁদের ব্যক্তিগত চেষ্টায় পাটের আবাদ বাড়ছে। সরকারি প্রণোদনা পেলে আরও ভালো হতো।

আজ জাতীয় পাট দিবস। ২০১৬ সালে প্রতিবছর ৬ মার্চ জাতীয়ভাবে এ দিবস পালনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘পাটশিল্পের অবদান, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।

জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, হবিগঞ্জের আবহাওয়া ও মাটি পাট চাষের জন্য উপযোগী। গত এক বছরে জেলার মাধবপুর, লাখাই ও বানিয়াচং উপজেলায় পাটের উৎপাদন বেড়েছে। সাধারণত তোষাজাতীয় পাট চাষ বেশি হচ্ছে এ অঞ্চলে। মার্চে পাটের আবাদ করা হয় এবং তা কাটা হয় জুন মাসে।

কৃষকেরা বলেন, চৈত্র-বৈশাখ মাসে পাটের বীজ বোনা হয়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের ভরা বর্ষায় পাট কাটা হয়। পরে জাগ দেওয়া হয়। পাটের আঁশ বিক্রি করে তাঁদের বেশি লাভ হয়। তবে পাটখড়িও ফেলনা নয়। সেগুলোও গত কয়েক বছর ধরে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে।

মাধবপুর উপজেলার বুল্লা গ্রামের পাটচাষি আবদুল আওয়াল (৫৭) বলেন, তিনি গত পাট মৌসুমে তিন একর জায়গায় পাট চাষ করে তিন লাখ টাকা আয় করেছিলেন। এক একর জমিতে পাট চাষ করতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। ওই এক একরের পাট বিক্রি করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। যে কারণে এলাকার কৃষকেরা আউশ ধানের বদলে পাট চাষ করেন।

একই এলাকার পাটচাষি দুলাল খাঁ (৫৫) বলেন, এক হেক্টর জমিতে পাট চাষ করলে খরচ হয় ৭৫ হাজার টাকা। একই খেতের পাট বিক্রি করা যায় ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকার। খরচ বাদে আয় হয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অথচ একই পরিমাণ জমিতে ধান রোপণ করলে পাওয়া যেত ৯০ থেকে ১ লাখ টাকা। তা ছাড়া পাটের বাজারদর ভালো। তিনি গত বছর সাড়ে তিন হাজার টাকা মণে পাট বিক্রি করেন বলে জানান।

বানিয়াচং উপজেলার হলদারপুর গ্রামের কৃষক ফজলুল হক (৫২) বলেন, বীজ ও সারের নিশ্চয়তা এবং কৃষি কর্মকর্তাদের তদারক পেলে তাঁরা পাট চাষে আরও মনোযোগী হবেন। মাঝেমধ্যে এসবের সংকটে পড়তে হয় তাঁদের। এগুলোর সমাধান হওয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

কয়েকজন পাটচাষির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পাটের বীজ তাঁরা বাজার থেকে কিনে থাকেন। বীজ ও সারের দাম নাগালের মধ্যে থাকে। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠে আসেন না। কোনো অসুবিধা হলে কার্যালয়ে গিয়েও তাঁদের নাগাল পাওয়া কষ্টসাধ্য।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, গত ৩ বছরের হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে হবিগঞ্জে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯০ হেক্টর। চাষাবাদ হয় ৪২৫ হেক্টর জমিতে। তাঁর মধ্যে মাধবপুর উপজেলায় ৩৩০ হেক্টর, বানিয়াচং ৩০ ও লাখাই উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা পুরোটা পূরণ হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৩০ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদিত হয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৩০ হেক্টর জমিতে। এ বছর পাটের আবাদ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, প্রতিবছর অল্প অল্প করে পাট চাষের আবাদ বাড়ছে। আবহাওয়া ও মাটি পাট চাষের জন্য এ জেলা উপযোগী। অথচ নয়টি উপজেলার মধ্যে শুধু তিনটি উপজেলায় পাট চাষ হয়।

কারণ, এখানকার কৃষকেরা শুধু ধান চাষে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কৃষি কার্যালয় থেকে কৃষকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন ধানের চেয়ে পাটে লাভবান হওয়া যায় বেশি। তবে সরকার থেকে পাটচাষিদের কৃষি উপকরণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিলে তাঁর মনে হয় এ জেলায় পাট চাষ আরও বাড়বে।

নুরে আলম সিদ্দিকী আরও বলেন, এ জেলায় পাট চাষে যতটুকুই সাফল্য এসেছে, তা স্থানীয় কৃষকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও চেষ্টায়। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের গাফিলতির বিষয়ে কৃষকদের কোনো অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন তিনি।