‘এক মাস সময় নিয়ে দেড় মাস হয়ে গেল। কী করবে না করবে ওসব তো আমার দেখার বিষয় না। আমার ট্যাকা দি যাও।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৩ মিনিট ১২ সেকেন্ডর একটি অডিওতে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। অডিওর ভিডিওতে কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দীকী আরাফাতের বিভিন্ন সময়ের ছবি দিয়ে কণ্ঠটি তাঁর বলে দাবি করা হয়েছে। একই ধরনের ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের আরও একটি অডিও রেকর্ড ফেসবুকে ফাঁস হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গাড়িচালক নিয়োগের দেড় মাসেও চুক্তি হওয়া ২০ লাখ টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ এবং এক চাকরিপ্রার্থীর কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করতে শোনা যায় অডিওগুলোতে। এ ছাড়া শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ ওরফে জয় ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিপুল হোসেন খানের নামও উঠে আসে।
অডিওটি সুপার এডিটেড বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী। এই অডিও ফাঁসের ঘটনায় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ফয়সাল।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় সানজিদা আক্তার তানিয়া নামের ফেসবুক আইডি থেকে ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের একটি এবং পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস নামের পেজ থেকে ৩ মিনিট ১২ সেকেন্ডের আরেকটি অডিও ছড়িয়ে পড়ে। মনোযোগ দিয়ে শুনলে বোঝা যাচ্ছে, একজন পুরুষকণ্ঠে ফোনে কথা বলছেন।
প্রথম অডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘২০ লাখ, ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে এভাবেই প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন আতাত করে চাকরি–বাণিজ্য করে যাচ্ছেন ইবি ছাত্রলীগ সভাপতি। ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ড্রাইভার পদে মিলনকে চাকরি দিয়ে, মিলন টাকা দিতে গড়িমসি করায় কথোপকথনে ক্ষোভ ঝাড়েন নিয়োগ–বাণিজ্যের হেড টিচার আরাফাত।’
অডিওতে বলতে শোনা যায়, ‘মাগুরার এক ভাই আছে, ওকে দিলে ২৫ লাখ টাকা পাতাম। ২৫ লাখ টাকা নিয়ে বসে ছিল, (অস্পস্ট)...। ওই যে আমার বিপুল (ছাত্রলীগ নেতা) আছে, ওখানে (অস্পষ্ট) ...। একেকজন ২০ লাখ টাকা খুশি হয়ে দিত...। ওর চাকরির জন্য হাবিবুরের চাকরি হলো না, হাবিবুর তো আমার ভাগনে হয়।’
অডিওতে আরও শোনা যায়, ‘হেলপারের চাকরির জন্য ২০ লাখ টাকা দিতে চাইল, এ তো ড্রাইভার! ও তো গাড়ি চালাতি পারে না, গাড়ির কোনো পার্টস চেনে না। সন্ধ্যায় এসে প্রতিদিন গাড়ি চালানো শেখে। তাহলে সে লোকের তো একটা বিবেক থাকা উচিত! কয় আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। হেনতেন সাতসতেরো (অস্পষ্ট)...। আমরা একদম সাইলেন্ট হয়ে আছি, ও তো হিসাব-নিকাশ ক্লিয়ার করবে (অস্পষ্ট)...।’
অডিওর একপর্যায়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ ওরফে জয়ের প্রসঙ্গেও কথা বলতে শোনা যায়। সেখানে বলা হয়, ‘জয় জয়ের বুঝটা পাইই গেছে। দুইটার একটা পেয়ে গেছে। জয় বলল, ‘‘ভাই, মিলন আপনার আত্মীয় মানুষ, বাড়ির পাশের, মিলনের সাথে বুঝে নেন।’’ জয় ওইটা থেকে কিছুই দেইনি। আর জয় যদি এতক্ষণ না পেত, পাগলা মতো হয়ে যেত। ওরতা সিন্ডিকেটের ৩ তারিখ বিকালেই পেয়ে গেছে। আর মিলনেরটা আমার উপর দিয়েছে। এখন চাকরি না থাকলে কি করে খাবিন ও...জমির মায়া করছে, জমির চিন্তা করছে!’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া চালক মিলন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাউকে টাকা দিয়ে বা টাকা দেওয়ার চুক্তি করে আমি নিয়োগ পাইনি। আমি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি।’
২০২২ সালে ৩১ জুলাই ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতকে সভাপতি ও নাসিম আহমেদ জয়কে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। আজও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমিও বিষয়টা শুনেছি। ফেসবুকে ফেক আইডিতে ছড়ানো অডিও শুনেছি। তবে এটা আমার না। খুবই অস্পষ্ট অডিও। এর সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা একদমই সঠিক না। এ ধরনের কাজের সঙ্গে আমি কখনোই জড়িত না। এটা অনেক গভীর রাজনৈতিক চক্রান্ত।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননূন যায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, থানায় একজনের মাধ্যমে আরাফাত জিডি করেছেন। জিডি নম্বর ৯৬৮। জিডিটি জেলা সাইবার ক্রাইম ইউনিটে পাঠানো হচ্ছে। তারা তদন্ত করবে।