কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি আবার বিপৎসীমার ওপরে

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার বিকেলে উব্দাখালী নদীর সেতু এলাকায় তোলা
ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় গত তিন দিনের অব্যাহত ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবার উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উব্দাখালী নদী ছাড়াও উপজেলার গণেশ্বরী, মহাদেও, বাখলা, মঙ্গেলশ্বরী ও বৈঠাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে বন্যার পানি উঠছে। এতে লোকজনের মধ্যে আবারও বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন

স্থানীয় বাসিন্দা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার থেকে অব্যাহত ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উব্দাখালীসহ সব কটি নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। আজ সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দেখা যায়, উব্দাখালী নদীর ডাকবাংলো পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। উপজেলার কৈলাটি, বড়খাপন, পোগলা, খারনৈ, রংছাতি, কলমাকান্দা সদরসহ সাতটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়া, ঘোষপাড়া-হরিণধরা, কলমাকান্দা-সাঈদপাড়া, মন্তলা-ইসবপুর, গোবিন্দপুর-রানীগাঁও, উদয়পুর-বড়খাপনসহ আরও বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক স্থানে স্থানে পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া খলা, বাসাউড়া, বাহাদুরকান্দা, ডুবিয়ারকোনা, ধীতপুরসহ ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকেছে।

আরও পড়ুন

খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বলেন, তাঁর ইউনিয়নের বাউসাম, লক্ষ্মীপুর, শ্রীপুর, খাগগড়া, বিশ্বনাথপুর, সেনপাড়া, রুদ্রনগরসহ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। কয়েকটি বাড়ির উঠানে ও কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি উঠেছে। আর এক থেকে দেড় ফুট পানি বাড়লে প্রচুর বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাবে। এর আগে গত ১৭ জুন থেকে উব্দাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপরে যায়। একই সঙ্গে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। গত ২৭ জুন থেকে পানি কমে বিপৎসীমার নিচে যায়।

আরও পড়ুন

পাউবো নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান আজ সন্ধ্যায় জানান, উব্দাখালী নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর পয়েন্টে পানি এখনো বিপৎসীমার ৪ দশমিক ৩৬ মিটার নিচে আছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৮৯ মিটার। নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৫৫ মিটার, সেখানেও পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ৫৬ মিটার নিচে আছে। কংস নদের পূর্বধলার জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার নিচে এবং ধুন নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ৯ দশমিক ৭৫ মিটার এবং খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। তবে আশা করা যাচ্ছে, ভারী বৃষ্টি না হলে বন্যার পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে। তিনি জানান, বন্যার পানি খালিয়াজুরির বিভিন্ন হাওর দিয়ে ইটনা, মিঠামইন ও ভৈরব হয়ে মেঘনা নদীতে চলে যাবে।

আরও পড়ুন

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ঢলের পানিতে উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চল আবারও নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে খোঁজখবর নিচ্ছি। এখনো কেউ পানিবন্দী হয়নি। জরুরি মুঠোফোন নম্বর খোলা হয়েছে। শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত রাখা আছে।’