‘আমাদের সাথে পারবে না, কিন্তু ২০–৩০ জন মার্ডার হয়ে যাবে’

আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজনকে দেওয়া হত্যার হুমকির একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। আজ শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের সাথে পারবে না, কিন্তু ২০-৩০ জন মার্ডার হয়ে যাবে।’

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ভিডিও গত ২১ ডিসেম্বর রাতের। সেদিন চরতী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরতীর কাটাখালী ব্রিজ এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর পক্ষে তাঁর স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী, শ্যালক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুহাম্মদ রুহুল্লাহ চৌধুরীসহ সমর্থকেরা গণসংযোগ করছিলেন। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেবের (ঈগল) সমর্থকেরা রিজিয়া রেজার গণসংযোগে হামলা করেন। এতে ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরী, সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানসহ অন্তত ১৮ জন আহত হন। এই ঘটনার কিছু সময় পর সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শিবলী নোমানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তখন সংসদ সদস্য পদ প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এই হুমকি দেন।

৫৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে বলতে শোনা যায়, ‘এখন কথা হলো যে আপনারা সরকার (ওসি প্রিটন সরকার) সাহেব, শিবলী নোমান ( অতিরিক্ত পুলিশ সুপার), ইউএনও (মিল্টন বিশ্বাস) সাহেব, আপনারা আমাকে মোটের মধ্যে একটা কথা বলেন, কালকে থেকে আমরাও কি মাঠে নেমে যাব মারামারিতে। মাঠে নেমে যাব কি না? আমাদের সাথে পারবে না, কিন্তু ২০-৩০ জন মার্ডার হয়ে যাবে। করব, না আপনারা ব্যবস্থা করবেন।’

এ ব্যাপারে জানার জন্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা ব্যস্ত পাওয়া যায়। তবে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী ইসলামুল হক আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা ওই সময় এমপি সাহেবের স্ত্রীর গণসংযোগে হামলা করেছিলেন। প্রশাসন যদি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না করে, তাহলে ভোটের দিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন ২০-৩০টি মার্ডার করতে পারেন। এই কথাই মূলত এমপি সাহেব প্রশাসনের লোকজনকে বোঝাতে চেয়েছিলেন।’

জানতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেবের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক আ ম ম মিনহাজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান সংসদ সদস্যের বক্তব্যে প্রমাণ করে যে ২০-৩০টি লাশ ফেলার ক্ষমতা তিনি যেহেতু রাখেন, তা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তার মানে, সন্ত্রাসী বা নাশকতা করার সব পরিকল্পনা তাঁর আছে। সুতরাং প্রশাসনকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।’

বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শিবলী নোমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেখানেই সমস্যা হয়, সেখানে প্রশাসনের লোক হিসেবে আমাদের যেতে হয়। আমাদের কাজই হলো শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে কাজ করা। সেদিন রাতের ঘটনার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম এবং এর পর থেকে এলাকায় আর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর চেয়ে বেশি বলার আর কিছু নেই।’