বালিয়াকান্দি উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর হামলা, আহত ৩

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ দাবি করেছেন, প্রতিপক্ষের সমর্থকেরা তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছেনছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া একই প্রার্থীর দুজন সমর্থককে দুটি স্থানে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। অনেককে ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার সোনাপুর মীর মশাররফ হোসেন কলেজ কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। আহত চেয়ারম্যান অভিযোগ করেছেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এহসানুল হাকিমের সমর্থকেরা এই হামলা চালিয়েছেন। তবে অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি এহসানুলের।

বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আবুল কালাম আজাদ (আনারস প্রতীক) ও এহসানুল হাকিম ওরফে সাধন (মোটরসাইকেল)। আবুল কালাম আজাদ বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। এহসানুল হাকিম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিমের চাচাতো ভাই।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল ১০টার দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ সোনাপুর মীর মশাররফ হোসেন কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সোনাপুর বাজারে তাঁর নির্বাচনী ক্যাম্পে যান। কিছুক্ষণ পর সেখানে মোটরসাইকেল প্রতীকের ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল গিয়ে হামলা চালিয়ে টেবিল–চেয়ার ভাঙচুর করতে থাকে। এ সময় চেয়ারম্যান প্রার্থীকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। তাঁকে রক্ষায় এগিয়ে এলে সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাককে (৪৫) পেটানো হয়। রাজ্জাককে উদ্ধার করে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

আরেকটি ঘটনায় নবাবপুর ইউনিয়নের বড়ইচারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে আনারস প্রতীকের সমর্থক ও চরদক্ষিণবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা হাসান খানকে (২৭) কুপিয়ে আহত করা হয়। তাঁকে প্রথমে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সজল কুমার সোম বলেন, দুজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আবদুর রাজ্জাককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসান খানকে রাজবাড়ীতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

সোনাপুরের একাধিক নারী ভোটার অভিযোগ করেন, ভোটকেন্দ্রে আসার সময় পথে মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মীরা তাঁদের আসতে নিষেধ করেছেন। বলেছেন, ভোট শেষ হয়ে গেছে। এখন আর কারও কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনাপুর বাজার এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। বাজারের বিভিন্ন স্থানে জটলা। প্রশাসনের উদ্যোগে জটলা ভেঙে দেওয়া হচ্ছিল। আনারস প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্পের ভেতর কয়েকটি চেয়ার ভেঙে ফেলা হয়েছে। এককোণে রক্তের ফোঁটা পড়ে আছে।

চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, নির্বাচনের আগে থেকেই প্রতিপক্ষের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা তাঁর কর্মীদের ওপর কয়েকবার হামলা করেছেন। সর্বশেষ আজ তাঁর ওপরই হামলা হলো। নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান প্রার্থী এহসানুল হাকিম বলেন, ‘ওই কেন্দ্রে আমার কোনো ভোট নেই। আমি বড়জোর ৫০ থেকে ৬০টি ভোট পেতে পারি। এ জন্য কেন্দ্রটি ছেড়ে দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সঠিক নয়। ওখানে প্রশাসনের লোকজন ধাওয়া দিয়েছে তাঁদের।’

হামলার খবর শুনে ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা জানিয়ে র‍্যাব-১০ ক্যাম্পের এএসপি আবদুল হান্নান খান বলেন, ‘চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ মোট দুজনের ওপর আঘাত করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।’