দেশের বাজারে যে চারটি খেজুর সবচেয়ে দামি
পবিত্র রমজানে ইফতারে প্রায় সবাই খেজুর রাখেন। এই এক মাসে খেজুরের চাহিদাও বেড়ে যায়। ফলে বাজারে খেজুরের দাম কত বাড়ল, সবচেয়ে ভালো মানের ও দামের খেজুর কোনটি—এসব নিয়ে রোজাদারদের আগ্রহ থাকে।
চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে দামি চারটি খেজুরের একটি হলো ‘মেডজুল’। এটিকে খেজুরের ‘রানি’ বলেও ডাকেন কেউ কেউ। বাজারে মেডজুলের তিন রকমের দাম পাওয়া গেছে। আকারে বড়, প্রায় দেড় থেকে আড়াই ইঞ্চি লম্বা মেডজুল, যা জাম্বো নামে পরিচিত। এটি বিক্রি হচ্ছে পাইকারিতে প্রতি কেজি ১ হাজার ৪০০ টাকা। আর খুচরা দোকানে পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।
মধ্যম মান ও আকারের মেডজুলের দাম পড়ছে পাইকারিতে প্রতি কেজি ১ হাজার ৩০০ টাকা, খুচরায় ১ হাজার ৫০০ টাকায়। এই সারির মেডজুল সাধারণত এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়।
তুলনামূলক ছোট আকারের মেডজুলও রয়েছে বাজারে। আকার এক ইঞ্চির ছোট। এটি পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। খুচরায় ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম স্টেশন রোডে খেজুরের বাজার ফলমন্ডিতে পাইকারি ও খুচরায় খেজুর কেনা যায়। এই বাজারে মায়েদা ডেটসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন জানালেন, মেডজুল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে মিসরের মেডজুলের কদর বেশি। দামও কিছুটা বেশি। মায়েদা ডেটসে বড়, মাঝারি ও ছোট—তিন রকমের মেডজুলই রয়েছে।
দামের তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে আজোয়া। বিখ্যাত এই খেজুরের উৎপাদন হয় সৌদি আরবের মদিনায়। জনপ্রিয়তার বিবেচনায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইংরেজি দৈনিক দ্য ন্যাশনাল-এর ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে আজোয়াকে খেজুরের ‘রাজা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে একসময় আজোয়া পাওয়া যেত সুপারশপ ও বড় বাজারগুলোয়। দাম বেশি থাকায় আমদানিও কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই খেজুরের আমদানি বেড়েছে। দাম কমেছে। এখন অলিগলির দোকানে, ভ্যানগাড়িতেও এই খেজুর পাওয়া যায়। মূলত ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এই খেজুরের দাম কমতে থাকে।
ফলমন্ডি, রেয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে বড়, মাঝারি ও ছোট আকারের আজোয়ার ভিন্ন ভিন্ন দাম পাওয়া গেছে। শুরুতে পাইকারির দামটা দেখে নেওয়া যাক। জামের মতো কালো রঙের আবরণে মোড়ানো বড় আকারের (এক থেকে দেড় ইঞ্চি) আজোয়া বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকায়। মধ্যম আকারের আজোয়া ৯৫০ টাকা, ছোট আকারের সাড়ে ৭০০ টাকায়। খুচরা বাজারে আজোয়ার দাম পড়ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা।
রোজা শুরু হওয়ার আগেই ফলমন্ডির আজোয়া ট্রেডার্সে বিক্রির ধুম পড়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। দুই সপ্তাহ আগেই প্রতিষ্ঠানটি পবিত্র রোজা সামনে রেখে বিক্রি শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের আজোয়াই পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রোজায় আজোয়ার কদর বেড়ে যায়। এই খেজুর খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিকরও।
চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদের বাসিন্দা রিয়াদুল হাসানকে পাওয়া গেল আজোয়া ট্রেডার্সে। তিনি দরদাম করে পাঁচ কেজি আজোয়া কেনেন ৫ হাজার ১০০ টাকায়। রিয়াদুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা বছরই খেজুর খাওয়া হয়। রোজায় আত্মীয়স্বজনদের উপহার হিসেবে পাঠাই। এ কারণে পাঁচ কেজি আজোয়া কিনলাম। এই খেজুর সবার পছন্দের।’ দাম কেমন মনে হলো, এমন প্রশ্নে রিয়াদুল বলেন, গত বছরের রোজার তুলনায় কিছুটা কম।
অভিজাত শ্রেণির খেজুরের মধ্যে মেডজুল ও আজোয়ার পরই ‘মাবরুম’-এর অবস্থান। সৌদি আরবের মাবরুম পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১ হাজার ১৫০ (বড় আকারের)। খুচরাই পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। মধ্যম সারির মাবরুমের দাম পড়ছে পাইকারিতে ৮২০ টাকা, খুচরায় ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, কয়েক বছর আগেও মেডজুল, আজোয়ার পর মরিয়মের অবস্থান ছিল। এখন ৩ নম্বর জায়গা দখল করেছে মাবরুম। মাবরুম একটু লম্বাটে, শুকনো। মরিয়মের সঙ্গে এই খেজুরের কিছুটা মিল ও অমিল রয়েছে। এই খেজুরের বিক্রিও বাড়ছে।
তালিকায় ৪ নম্বরে ‘মরিয়ম’-এর অবস্থান। সৌদি আরব, ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও মিসর থেকে দেশে মরিয়ম খেজুরের আমদানি হয়। তবে সৌদি ও ইরানি মরিয়মের চল বেশি। মানভেদে এই খেজুরের দামেও নানা রকমফের রয়েছে। মরিয়ম পাইকারিতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। খুচরায় সবচেয়ে ভালো মানের মরিয়ম খেজুরের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ১ হাজার ২৫০ টাকা। এটি সৌদি মরিয়ম নামে পরিচিত।
ইরানি মরিয়মের দাম পাইকারিতে ৫০০, খুচরায় সাড়ে ৬০০ টাকা। ভালো মানের মরিয়মের রং উজ্জ্বল বাদামি। এগুলো প্রায় দেড় ইঞ্চির মতো লম্বা। বাজারে কালমি মরিয়ম, সুফরি মরিয়মসহ বিভিন্ন নামে এই খেজুর পাওয়া যায়।
দামি খেজুরের আমদানি কেমন
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে খেজুর আমদানির তথ্য রয়েছে ১৯৭৭ সাল থেকে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, শুরুতে খুব সামান্য পরিমাণে খেজুর আমদানি হতো। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে আমদানি। যেমন এ শতকের প্রথম দশকে বছরে গড়ে ২৪ হাজার টন খেজুর আমদানি হতো। দ্বিতীয় দশকে তা দাঁড়ায় ৪৫ হাজার টনে। গত চার বছরে গড়ে আমদানি হচ্ছে ৮৬ হাজার টন করে।
এবার রোজার আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বের ১৬টি দেশ থেকে ৩৭টি জাতের খেজুর এনেছেন ব্যবসায়ীরা—এমন তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। পরিমাণের হিসাবে ৬১ হাজার টন বা ৬ কোটি ১০ লাখ কেজি। এর মধ্যে দামি খেজুর আমদানি হয়েছে মাত্র তিন হাজার টন, মোট আমদানির ৫ শতাংশ। অর্থাৎ মেডজুল, আজোয়া, মাবরুম ও মরিয়মের মতো দামি খেজুরগুলোর আমদানি এখনো কম।