নাচে, গানে আনন্দ আয়োজনে সিলেটে কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা
পৌষের সকালে কুয়াশা কেটেছেমাত্র। সকালের মিষ্টি রোদের সঙ্গে হালকা বাতাস বইছিল। এর মধ্যেই সিলেটের শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে উপস্থিত হতে থাকেন কৃতী শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অভিভাবকেরাও। তাঁরা চোখে–মুখে উচ্ছ্বাস নিয়ে আজ বুধবার সকালে সিলেট শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছিলেন।
শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নির্ধারিত বুথ থেকে ক্রেস্ট, স্ন্যাকস ও ডিজিটাল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন এইচএসসির কৃতী শিক্ষার্থীরা। জীবনের লক্ষ্য লেখার বোর্ডে অনেকে লিখছিলেন পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া, ডাক্তার হওয়া, বিদেশ গিয়ে উচ্চশিক্ষা, গবেষণার কথা। কেউ কেউ লিখেছেন ইসলামি স্কলার হওয়ার লক্ষ্যের কথাও।
উচ্চমাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি-প্রথম আলো আয়োজন করেছে জিপিএ-৫ কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব।। ‘স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে, এক সাথে’ স্লোগানে চট্টগ্রাম, রংপুর, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও বরিশালের পর সিলেটের মধ্য দিয়ে শেষ হলো আয়োজন। প্রথম আলোর এ আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করছে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি।
সকাল ৯টার আগেই শিক্ষার্থীরা সিলেট শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে হাজির হয়ে নিজেদের মধ্যে আড্ডা, গল্প, উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ও প্রথম আলোর ফটো বুথ, ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও বুথে হাসিমাখা মুখে ছবি তুলে আনন্দ ভাগাভাগি করেন, মেতে ওঠেন মিনি গলফ খেলায়। অনেকে খেলায় জয়ী হয়ে জিতে নেন পুরস্কার।
সিলেট মহিলা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া সৈয়দা নুজহাত নিগাদ আসেন মা ফারহানা নিগাদের সঙ্গে। নুজহাতের প্রথম পছন্দ ছিল চিকিৎসক হওয়া। এর মধ্যে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নের প্রাথমিক ধাপ পার হয়েছেন মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে। তাঁর স্বপ্ন মানবিক চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের সেবা এবং অভিভাবকদের মুখ উজ্জ্বল করা। মা ফারহানা নিগাদ বলেন, ‘মেয়ের সামনের পথ আরও কঠিন, সেই পথ যাতে সহজে পাড়ি দিতে পারে, এ জন্য সবার প্রার্থনা চাই।’
মেয়ে তাসকিয়া আজাদকে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান সাবেক সেনাসদস্য আবুল কালাম। তাসকিয়া সিলেট সরকারি কলেজ থেকে এবারের এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তাসকিয়ার তাঁর স্বপ্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। পরে বিসিএস দিয়ে প্রশাসনে যোগ দিয়ে দেশের সেবা করা।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ থেকে ছেলে জাকারিয়া জাহেদ রেদওয়ানকে নিয়ে কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। সামনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবে। আশা করছেন, দুটির মধ্যে যেকোনো একটিতে ভর্তি হতে পারবেন তাঁর ছেলে।
অনুষ্ঠানস্থলে সিলেট সরকারি কলেজের পাঁচ শিক্ষার্থীর গল্প থামছিল না। তাঁরা হলেন জিসান আহমেদ, মাহফুজুর রহমান, রবিউল ইসলাম, রাফসান হক ও প্রবাল রায়। তাঁরা জানান, পাঁচজন আগে কলেজে থাকতে একসঙ্গে গল্প–আড্ডায় মেতে থাকলেও এখন দেখা হয় না বললেই চলে। আগে প্রতিদিন দেখা হতো, কথা হতো। এখন একেকজন একেক জায়গায়। ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নিয়ে সবাই ব্যস্ত।
সিলেটের অনুষ্ঠানে নিবন্ধন করেন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। সকাল সাড়ে ১০টায় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেটে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশ।
এরপর শুরু হয় প্রথম পর্ব ক্যারিয়ার, উচ্চশিক্ষার নানা বিষয় নিয়ে কয়েকটি সেশন। পরীক্ষার প্রস্তুতি ও ক্যারিয়ার সেশনটি সঞ্চালনা করেন ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রফেশনাল ফেলো জাহিদ হোসাইন খান। এতে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ সৌরভ, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মিছবাহ সুমরি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শেখ মোহাম্মদ আশিক, জান্নাতুল ফাতেহা নাদিয়া, মানত বিন খন্দকার, মো. ওজায়ের হাসান, হৃদয় হাসান ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর শাহাদাত আহমেদ।
আলোচনা করেন ইউএস অ্যাম্বাসির আইভিএলপি অ্যালামনাই প্রণবকান্তি দেব। বক্তব্য দেন ওয়ালটনের মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন অ্যাডিশনাল এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. রবিউল ইলাম মিলটন। প্রথম আলোর প্রধান ডিজিটাল বিজনেস কর্মকর্তা জাবেদ সুলতান তাঁর বক্তব্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর মঞ্চে কণ্ঠশিল্পী অনিক সূত্রধর গান পরিবেশন করেন। তাঁর সঙ্গে গলা মেলান শিক্ষার্থীরা।
এরপর কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল কবির, রেজিস্ট্রার মো. সাকির হোসাইন, ইংরেজি বিভাগের প্রধান নাজলা ফাতমী ও স্কুল অব লয়ের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তাঁরা বলেন, সময় নষ্ট করা যাবে না। এখন দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলোর শিক্ষার মান অনেক উন্নত। পরিবেশ অনেক ভালো। অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের উচ্চশিক্ষার জন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আস্থার সঙ্গে ভর্তি হতে পারেন।
এরপর মঞ্চে ওঠেন গীতিকার কবির বকুল। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদেরকে তিনটি ‘ম’ মুখস্থ, মিথ্যা ও মাদককে না বলার শপথ পড়ান। কবির বকুল মঞ্চে ডেকে নেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া ও রুকাইয়া জাহান চমককে। রুকাইয়া জাহানের সঙ্গে মঞ্চে নৃত্যে অংশ নেন কৃতী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন।
মঞ্চে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন রুকাইয়া জাহান। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের সৎ সাহস ও দেশপ্রেম নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। শেষে সাজিদ ফাতেমী ও তাঁর দলের লোকগান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে গানে গানে পর্দা নামে উৎসবের।