৭৫ বছর বয়সে বিএ পাস করলেন কৃষক সাদেক আলী, পেলেন সংবর্ধনা

৭৫ বছর বয়সে বিএ পাস করায় সাদেক আলী প্রমাণিককে সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) কর্তৃপক্ষ। রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ক্যাম্পাসের মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

৭৫ বছর বয়সে বিএ পাস করেছেন সাদেক আলী প্রমাণিক। এ কারণে তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ক্যাম্পাসের মিলনায়তনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম।

বাউবি কর্তৃপক্ষ জানায়, নাটোরের একটি কলেজের বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বিএ পরীক্ষা দেন সাদেক আলী প্রমাণিক। সম্প্রতি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হলে তিনি পাস করেন। সাদেক আলী পেশায় একজন কৃষক।

সাদেক আলীর ছেলে নাসির উদ্দিন জানান, তাঁর বাবা ১৯৭৪ সালে এসএসসি ও ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। আর্থিক অনটন ও বিভিন্ন সংকটে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০২০ সালে বাউবির নাটোরের দিঘাপতিয়া এম কে কলেজে ভর্তি হন। শেষের দিকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর বাঁ পায়ের দুটি হাড় ভেঙে যায়। প্রায় দুই মাস তাঁকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা নিতে হয়। শেষের কয়েক সেমিস্টারের পরীক্ষা ক্রাচে ভর দিয়ে দিয়েছেন। পরীক্ষায় ২ দশমিক ৭৫ সিজিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন সাদেক আলী।

আরও পড়ুন

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল হাসনাত মোহা. শামীম প্রমুখ।

উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘অসুস্থ শরীর, ভাঙা পা, তবু ৭৫ বছর বয়সে বিএ পাসের এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শিক্ষার কোনো বয়স নেই। সাদেক আলী অদম্য যোদ্ধা। এই সমাজের বাতিঘর। এটা কেবল ডিগ্রি অর্জনের গল্প নয়। এটা মানুষের ইচ্ছাশক্তির জয়, বয়সকে অতিক্রম করার অঙ্গীকার। সাদেক আলীর নাম এখন শুধু পরীক্ষার ফলাফলের তালিকায় নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গলির মোড়ে মোড়ে, চায়ের আড্ডার খোরাক হিসেবে, প্রেরণার অনন্ত নদীর মতো। এটা শুধুই গল্প নয়, জীবনের জয়গাথা।’

আরও পড়ুন

অনুষ্ঠানে কৃষক সাদেক আলী প্রামাণিক বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় মা–বাবা হারিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে বেড়ে উঠেছি। আর্থিক সংকটে উচ্চমাধ্যমিকের পর পড়া ছাড়তে হয় এবং কৃষিকাজে মন দিয়ে পরিশ্রম করে জমিজমা, খামার ও বাগান গড়ে তুলি। ২০১৬ সালে পবিত্র হজ করার পর ছেলের উৎসাহে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভালো ফল করি, যা জীবনে নতুন অনুপ্রেরণা এনে দেয়।’ তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না পেলে জীবনের বড় একটি আক্ষেপ থেকে যেত। এ জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানান তিনি।

আরও পড়ুন