এক আঙুল দিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে নিপা

এক আঙুল দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে শরীয়তপুরের আংগারীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী নিপা আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

মেয়েটির এক হাতে কোনো আঙুল নেই। আরেকটি হাতে একটি আঙুল। জন্ম থেকে এ অবস্থা নিপা আক্তারের (১৬)। এক আঙুল দিয়ে লিখেই এবারের এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সে। অদম্য এই কিশোরীর বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার চরকাশাভোগ গ্রামে। সে বিল্লাল হোসেন মোল্লা ও নাছিমা বেগম দম্পতির মেয়ে। আংগারিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে চলতি বছর সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

নিপার পরিবার জানায়, ২০০৭ সালে নিপার জন্ম। জন্মের সময় নিপার বাঁ হাত কবজি পর্যন্ত ছিল। আর ডান হাতে একটি আঙুল হয়। শিশু বয়স থেকে একটি আঙুল দিয়েই নিপা তার নিজের কাজকর্ম করতে থাকে। পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়ির পাশের ৭ নম্বর চরচটাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। তখন সে এক আঙুল দিয়ে লেখার পদ্ধতি রপ্ত করে। এভাবেই এক শ্রেণি থেকে আরেক শ্রেণিতে উঠতে থাকে সে।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে নিপাকে ভর্তি করা হয় আংগারিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সে।

নিপার বাবা বিল্লাল হোসেন মোল্লা স্থানীয় আংগারিয়া বাজারে একটি মুদিদোকানে শ্রমিকের কাজ করেন। নিপারা তিন বোন ও দুই ভাই। অভাবের সংসারে মা–বাবা নিপাকে কষ্ট করেই পড়াশোনা করাচ্ছেন।

নিপা আক্তার প্রথম আলোকে বলে, ‘আমার হাতে নয়টি আঙুল নেই। একটি আঙুল দিয়ে সব কাজ করতে হয়। একটি আঙুল দিয়ে আমি ছোটবেলা থেকে লিখতে শিখেছি। সবার সহযোগিতায় আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে শিক্ষক হতে চাই। আমার মতো অসহায় ও বিপদে থাকা প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’

নিপার মা নাছিমা বেগম বলেন, ‘নিপার পড়ালেখা করার অনেক আগ্রহ। তাকে আমরা পড়াতে চাই। ওর নামে একটা প্রতিবন্ধী ভাতা আছে।’ নিপার বাবা বিল্লাল হোসেন মোল্লা শত কষ্টের মধ্যেও মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে আগ্রহী।

আংগারিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রণজিৎ কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ছাত্রী নিপার একটি আঙুল। এক আঙুল দিয়েই সে লক্ষ্য পূরণের জন্য লড়ে যাচ্ছে। মেয়েটি অসম্ভব মেধাবী। তার ইচ্ছাশক্তি দেখে আমরা অভিভূত। পাঁচ বছর ধরে আমাদের বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। কখনো অমনোযোগী হতে দেখিনি। আমরা তাকে সব সময় সহযোগিতা করেছি।’

শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবন্ধী এক মেধাবী ছাত্রী শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ওই শিক্ষার্থীর পাশে সব সময় থাকবে। সে যাতে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে, তার উদ্যোগ নেওয়া হবে।