শেরপুরে বন্য প্রাণীর জন্য হচ্ছে ‘খাদ্যবাগান’
শেরপুরের গারো পাহাড়ে হাতিসহ বন্য প্রাণীর খাদ্যসংকট কমাতে পাহাড়ি টিলাজুড়ে ‘খাদ্যবাগান’ গড়ে তুলছে বন বিভাগ। এতে একদিকে বন্য প্রাণীর জন্য নিরাপদ খাদ্য ও আবাসস্থল তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে কমবে মানুষ ও বন্য হাতির দ্বন্দ্ব—এমনটাই আশা বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।
শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ি সীমান্ত সড়ক থেকে দুর্গম পাহাড়ি পথ পেরিয়ে রাজাপাহাড়ের চূড়ায় ৩১ একর বনভূমি দখল করে সবজি চাষ করতেন কয়েকজন গ্রামবাসী। পরে বন বিভাগ জমিটি দখলমুক্ত করে সেখানে বন্য হাতিসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর খাদ্য উপযোগী বাগান গড়ে তোলে।
রাজাপাহাড়ের ওই বাগানে ৬২ প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে চাপালিশ, বট, পাকুড়, জলপাই, কামরাঙা, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, কাঁঠাল, বড়ই, করমচা, কলা, বেল, চালতা, আতাফল, বহেড়া, আমলকী ও হরীতকী।
বন বিভাগ জানায়, রাজাপাহাড়ের বাইরে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের বিভিন্ন টিলায় মোট ২৬০ হেক্টর বনভূমিতে খাদ্যবাগান তৈরি করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে শ্রীবরদীর রাজাপাহাড়, খ্রিষ্টানপাড়া, মালাকুচা ও ডুমুরতলায় ১৩৫ হেক্টর, ঝিনাইগাতীর তাওয়াখুচা, গজনী ও রাংটিয়ায় ৭০ হেক্টর এবং নালিতাবাড়ীর বাতকুচি ও পানিহাটায় ৫৫ হেক্টর জমিতে এসব বাগান গড়ে তোলা হয়। চলতি অর্থবছরে আগাম বাগান তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ বন বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার ৩ উপজেলায় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বনভূমি আছে। এসব এলাকায় সারা বছর শতাধিক বন্য হাতির দল বিচরণ করে। বোরো ও আমনের মৌসুমে ধান ও কাঁঠাল পাকলে হাতির পাল লোকালয়ে নেমে আসে। ফসল রক্ষায় হাতি তাড়াতে গেলে প্রায়ই মানুষ ও হাতির প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, পাহাড়ে খাদ্যের স্থায়ী উৎস তৈরি হলে বন্য প্রাণী লোকালয়ে নামবে না।
রাজাপাহাড় এলাকার বাসিন্দা কোহিনুর মিয়া বলেন, ৬২ প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। গাছগুলো বড় হতে শুরু করেছে। দুই-তিন বছরের মধ্যে বাগানটি প্রাকৃতিকভাবে পূর্ণতা পাবে। তাঁরা পাহারা দেন যেন কোনো ক্ষতি না হয়।
ঝিনাইগাতীর গজনী বিট কর্মকর্তা সালেহিন নেওয়াজ খান বলেন, বন্য প্রাণীর খাদ্যের কথা বিবেচনা করেই পাহাড়ের টিলায় টিলায় বাগান করা হয়েছে। বাগানগুলো পরিপূর্ণ হলে বন্য প্রাণীর লোকালয়ে নামার প্রবণতা অনেক কমবে।
গারো পাহাড়জুড়ে এই বাগান গড়ে তোলায়, পাখি থেকে শুরু করে পাহাড়ের বিভিন্ন বন্য প্রাণীর খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে বলে আশা করেন নালিতাবাড়ী মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী। সেই সঙ্গে বন্য প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে উঠবে বলেও মত তাঁর।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘শাইন’-এর নির্বাহী পরিচালক মুগনিউর রহমান বলেন, বন্য প্রাণীর খাদ্য ও আবাসস্থল নিশ্চিত করতে বন বিভাগের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। পর্যায়ক্রমে এ বাগানের পরিধি আরও বাড়াতে হবে। ফলে হাতিসহ অন্য পশুপাখির নিরাপদ আশ্রয় তৈরি হবে।
শ্রীবরদী বালিজুড়ি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, পাহাড়ে হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ায় খাদ্যের সন্ধানে তারা লোকালয়ে চলে আসে। খাদ্যবাগান তৈরি হলে এই পরিস্থিতি বদলাবে এবং হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব অনেকটাই কমে আসবে। পাশাপাশি ঔষধি ও বনজ চারা রোপণের ফলে একটি টেকসই বাস্তুসংস্থান গড়ে উঠবে।