অযত্নে ভোলার জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র

১৯২৬ সালে ভোলা মুসলিম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি চালু হয়। নির্বাচিত পরিচালনা কমিটি না থাকায় গ্রন্থাগারটি এখন বন্ধ হতে চলেছে।

ভোলা মুসলিম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির ভবন। গতকাল তোলা ছবিপ্রথম আলো

একসময়ের ভোলায় জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র ভোলা মুসলিম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির অবস্থা এখন খুব করুণ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও অযত্ন–অবহেলায় গ্রন্থাগার ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় গ্রন্থাগারের চেয়ার–টেবিল, বই রাখার আলমারি ও অন্যান্য আসবাব এবং বইয়ের ওপর ধুলার আস্তরণ জমে আছে। এসব কারণে এখানে আর পাঠকেরা আসেন না।

আজ ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। এদিনে সারা দেশের মতো ভোলায়ও গণগ্রন্থাগার ও জেলা প্রশাসন জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদ্‌যাপন করবে। এ দিবসে ভোলার নাগরিক সমাজ প্রায় শতবর্ষী এবং ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগারটি পুনরায় যথাযথভাবে চালু করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাজে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

‘মুসলিম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিতে কী হয়, তা–ই আমি জানি না। আমি গ্রন্থাগারটি পূর্ণাঙ্গভাবে করতে যা যা দরকার, তা–ই করব।’
আরিফুজ্জামান, ভোলা মুসলিম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতি ভোলার জেলা প্রশাসক

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯২৬ সালে তৎকালীন মুসলিম যুবসমাজ এ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেছিল। দেশি–বিদেশি লেখকদের বিখ্যাত সব বই নিয়ে এই গ্রন্থাগারের কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে কলকাতা থেকে বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক, মাসিক, পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক সাময়িকীও আসত। শত শত পাঠক গমগম করতেন। সেই গ্রন্থাগার এখন পাঠকশূন্য। স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে যাঁরা এ গ্রন্থাগারের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা এখনো অনেকে বেঁচে আছেন।

ভোলা জেলার ইতিহাস বইয়ের লেখক নব্বইয়ের দশকে এ গ্রন্থাগার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমলে ভোলা শহরের হাতে গোনা কয়েকটি মুসলিম পরিবার ছিল। তাঁদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য মুসলিম সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এর মধ্যে ভোলা মুসলিম বোর্ডিং একটি। ভোলা সরকারি স্কুলের পাশের এ বোর্ডিংয়ে থেকে মুসলিম ছাত্ররা পড়াশোনা করতেন। এখান থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয় ভোলা মুসলিম ইনস্টিটিউট ও ভোলা মুসলিম এডুকেশন কমিটি। ১৯২৬ সালের কোনো এক সন্ধ্যায় তাঁরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে গ্রন্থাগারটি চালু করেন। স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে ইনস্টিটিউট কক্ষে আসে টিভি। তখনো ভোলার মানুষ টিভি দেখার জন্য ভিড় করতেন।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, একটি দ্বিতল ভবনে গ্রন্থাগারের কার্যক্রম চলছে। তবে প্রবেশদ্বারের দুই পাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে একাধিক ফেস্টুন ও ব্যানার ঝোলানো। দ্বিতল ভবনের নিচতলার পুরোটা ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ভবনের আশপাশে টিনের ঘর তুলে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণের প্রাচীর ভেঙে দোকানঘর তোলা হয়েছে।

ভবনের দোতলার এক পাশে পড়ার কক্ষ। সারি করা আলমারির তাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বই। দুটি পড়ার টেবিলের চারপাশে ১৭টি চেয়ার। তাতে কোনো পাঠক নেই। টেবিলজুড়ে দৈনিক পত্রিকা। কিন্তু সেগুলো অগোছালো অবস্থায় রাখা। গ্রন্থাগারের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেউ নেই। এ গ্রন্থাগারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন নৈশপ্রহরী চেয়ারে বসে টিভি দেখছেন। পাঠক বলে এখানে কিছু নেই।

গ্রন্থাগার সূত্রে জানা গেছে, এখানে বিজ্ঞান, ইতিহাস, ইসলাম ধর্ম, শিল্প–সংস্কৃতি, খেলাধুলাসহ নানা বিষয়ের পাঁচ হাজার বই আছে। এসব বই ১২টি আলমারিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু আলমারিগুলো তালাবদ্ধ।

ভোলা মুসলিম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক মো. লোকমান হোসেন বলেন, নিয়ম এটাই। নিরাপত্তার স্বার্থে তালা মারা হয়েছে। কেউ বই চাইলে তালা খুলে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান বলেন, ‘মুসলিম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির সামাজিক–সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাচ্ছে।’

ভোলা মুসলিম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতি ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, ‘মুসলিম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিতে কী হয়, তা–ই আমি জানি না। আমি গ্রন্থাগারটি পূর্ণাঙ্গভাবে করতে যা যা দরকার, তা–ই করব।’