বন্য হাতির ভয়ে আধা পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক

পানিহাটা ও ফেকামারী এলাকার অর্ধশতাধিক প্রান্তিক কৃষক বন্য হাতির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় আধা পাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন।

নালিতাবাড়ীতে বন্য হাতির ভয়ে আধা পাকা ধান কাটছেন চাষিরা। গতকাল সকালে উপজেলার পানিহাটা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পানিহাটা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক বিজার কুবির (৭২)। ধারদেনা করে পানিহাটা ও ফেকামারী সীমান্তে ৬৫ শতক জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন তিনি। ফলন ভালোই হয়েছে। ধান পাকতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। কিন্তু তার আগেই গত শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ছেলেসহ কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে আধা পাকা ধান কেটে নেন বিজার কুবির।

আধা পাকা ধান কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজার কুবির বলেন, ‘খেত থাইকা ১০০ মিটার দূরে তালতলা পাহাড়ে ৪০টার মতো আত্তি (হাতি) অবস্থান করতাছে। কী করমু, আত্তির ডরে সবারিত আধা পাহা ধান কাডুন লাগতাছে। এ ছাড়া ফসল রক্ষার তো কোনো উপায় নাই।’

শুধু বিজার কুবির একা নন, তাঁর মতো উপজেলার পানিহাটা ও ফেকামারী সীমান্তবর্তী এলাকার অর্ধশতাধিক প্রান্তিক কৃষক বন্য হাতির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় আধা পাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। হাতির দলকে প্রতিরোধ করতে তাঁরা ফসল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

বন বিভাগ ও কয়েকজন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে সীমান্তবর্তী পানিহাটা ও ফেকামারী গ্রামের ভারতের সীমান্ত তারঘেঁষা ১০০ একর জমিতে অর্ধশতাধিক প্রান্তিক কৃষক আমন ধান আবাদ করেছেন। ওই এলাকায় ধান পাকতে আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু ওই জমির ১০০ মিটার পূর্ব দিকে তালতলা টিলায় পাহাড়ি জঙ্গলে পাঁচ দিন ধরে ৪০ থেকে ৪৫টি বন্য হাতির দল অবস্থান করছে।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পাহাড় থেকে পানিহাটা এলাকায় হাতির পাল ধানখেতে নেমে আসে। এ সময় ওই গ্রামের শুকুল চিসিমের ৫০ শতক জমির ধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে ফেলে। দ্রুত টের পেয়ে এলাকাবাসী মশাল জ্বালিয়ে ও ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতির দলকে প্রতিরোধ করেন। পরে হাতির পালটি আবার জঙ্গলে চলে যায়। গত শুক্রবার সকাল থেকে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা তাঁদের জমি থেকে আধা পাকা ধান কেটে নিয়ে আসছেন।

পানিহাটা গ্রামের লিটন মানকিন বলেন, ‘আমি ৫০ শতক জমিতে আমন ধান করেছি। ফসল পাকতে ও কাটতে আরও এক-দুই সপ্তাহ সময় দরকার আছিল। কিন্তু হাতির আক্রমণের ভয়ে নিরুপায় অইয়া আধা পাকা ফসল কাইটা বাড়ি নিয়া আসছি।’

পানিহাটা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক প্রদীপ নিংমিংজা বলেন, ‘সীমান্তের সাড়ে ৪৫ শতক জমিতে ধান চাষ করছি। ফলনও ভালো অইছে, কিন্তু প্রতি রাতে আত্তি অত্যাচার করে। তাই নিরুপায় অইয়া আধা পাহা ধান কাইটা বাড়ি আনতাছি।’

বন বিভাগের গোপালপুর বিট কর্মকর্তা সাব্বির জাহাঙ্গীর বিন ওয়ালি বলেন, পাঁচ দিন ধরে পানিহাটা ও ফেকামারীর পাশেই তালতলা জঙ্গলে ৪০ থেকে ৪৫টি বন্য হাতির দল অবস্থান করছে। সমতলে হাতি প্রতিরোধে বন বিভাগের কর্মকর্তাসহ এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জার আবদুল করিম বলেন, ‘খাদ্যের সন্ধানে হাতির দলটি প্রতি রাতে ধানখেতে হানা দিতে চায়। তাই ফসল রক্ষায় কৃষকেরা খেত থেকে আধা পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে যদি ফসলে হাতির পাল আক্রমণ করে বন বিভাগ থেকে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে কেউ যেন হাতির কোনো ক্ষতি না করতে পারেন, তার জন্য আমরা পর্যবেক্ষণে রয়েছি।’